‘ইরান-ইসরাইল সংঘাতে মার্কিন সম্পৃক্ততার পরিণতি হবে ভয়াবহ’: হুশিয়ারি রাশিয়ার

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০২৫, ১৫:৩৯ | আপডেট: ১৯ জুন ২০২৫, ১৬:০২

বিশেষ প্রতিনিধি
সংগৃহীত

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যদি হস্তক্ষেপ করে, তবে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে একটি ‘ভয়াবহ সংঘাতের সিঁড়ি’ খুলে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স-কে জানান, “মার্কিন হস্তক্ষেপ কেবল সংঘর্ষ বাড়াবে এবং সমাধানের পথ রুদ্ধ করবে।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী এবং সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা ইসরায়েলের ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল এসব হামলার জন্য সরাসরি ইরানকে দায়ী করছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছে এবং পারস্য উপসাগরে নিজের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে।

ট্রাম্পের অবস্থান
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি "সব দিক বিবেচনা করে" সিদ্ধান্ত নেবেন যে যুক্তরাষ্ট্রের কি করা উচিত। যদিও তিনি এখনো ক্ষমতায় নেই, তবে তার বক্তব্য মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের নির্বাচন পরবর্তী সম্ভাব্য রাজনীতিক হিসেবেও।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন পূর্বেও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল, যার মধ্যে কুখ্যাত কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার ঘটনা অন্যতম। তাই তার পুনরায় ক্ষমতায় ফেরা মানেই হতে পারে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের আরও অবনতি।

সামরিক বিশ্লেষণ

 বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ইরান পারস্য উপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ, যেমন হরমুজ প্রণালী, বন্ধ করে দিতে পারে। এতে বৈশ্বিক জ্বালানির সরবরাহে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। এছাড়াও ইরান তার আঞ্চলিক মিত্রদের মাধ্যমে ইসরায়েল এবং মার্কিন ঘাঁটিগুলোর ওপর পাল্টা হামলা চালাতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি করবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া  

 রাশিয়ার পাশাপাশি চীনও ইরানকে সমর্থন দিয়ে আসছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে "উত্তেজনা থেকে বিরত থাকার" আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ সংঘাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি আলোচিত হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার ভেটোর কারণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।


ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ইতিমধ্যেই একটি আঞ্চলিক সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদে হুমকি হয়ে উঠতে পারে। রাশিয়া ও চীনের কৌশলগত অবস্থান এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের স্বার্থ এই উত্তেজনাকে একটি ভূরাজনৈতিক সংঘর্ষে পরিণত করতে পারে।