গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৯২ জন নিহত

প্রকাশ | ২০ জুন ২০২৫, ১০:২৯

যাযাদি ডেস্ক
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি হামলার সময় উত্তর গাজা উপত্যকার জাবালিয়ায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ছে

গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯২ জন নিহত হয়েছেন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলাগুলোতে খাবারের খোঁজে জড়ো হওয়া অসহায় ফিলিস্তিনিরাও প্রাণ হারিয়েছেন। খবর আল জাজিরার। 

এর মধ্যে গাজা শহর ও উত্তরাঞ্চলে নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৪ জন এবং দক্ষিণ ও উত্তর গাজাকে বিভক্ত করা নেতজারিম করিডোরের কাছে সহায়তা নিতে আসা আরও ১৬ জন নিহত হয়েছেন।

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিন এই এলাকাটিতে জড়ো হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর খাবার সহায়তা পেতে। তবে জাতিসংঘ এই সহায়তা কার্যক্রমকে “মানবিক সহায়তার অস্ত্রায়ন” হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।

সাক্ষাৎকারে বাসসাম আবু শাআর নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী এএফপিকে বলেন, “রাত ১টার দিকে তারা আমাদের ওপর গুলি চালানো শুরু করে। 

ট্যাংক, বিমান ও ড্রোন থেকে গোলাবর্ষণ চলছিল। আমরা কাউকে সাহায্য করতে পারিনি, এমনকি নিজেরাও পালাতে পারিনি। এত ভিড় ছিল যে কারও পক্ষে দৌড়ে পালানো সম্ভব ছিল না।”

সম্প্রতি গাজায় খাদ্য সহায়তার লাইনে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলা বেড়েই চলেছে, এতে প্রতিদিনই প্রাণহানি ঘটছে।

দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানান, এখন প্রতিদিনই সহায়তা নেওয়ার কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলা হচ্ছে। 

“তিন মাস ধরে সীমান্ত বন্ধ থাকায় গাজা পরিণত হয়েছে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কেন্দ্রে। মানুষকে এখন ময়দার ব্যাগ, পানির বোতল কিংবা পুষ্টিহীন খাবার নিতে জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “এই হামলা চলমান এবং প্রতিটি সহায়তা কেন্দ্র এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।”

এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, কিছু "সন্দেহভাজন" ব্যক্তি তাদের সেনাদের কাছে এগিয়ে আসছিল, যা সেনাদের জন্য হুমকি ছিল। এ কারণে তারা সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছে। তবে তারা হতাহতের বিষয়ে কিছু জানে না বলেও জানিয়েছে।

অন্যদিকে আল শাতি শরণার্থী ক্যাম্পে মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইস চার্জ দেওয়ার জন্য তৈরি একটি অস্থায়ী তাঁবুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় আরও ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

উত্তর গাজার জাবালিয়ায়ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ চালানো হয়েছে।

আল জাজিরার হিন্দ খোদারি জানান, “প্রায় দেড় বছর ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ বাধ্য হয়ে এই চার্জিং পয়েন্টে আসছিল। সেখানে হামলা শুধু মানবিক সংকটেরই নয়, বর্বরতারও প্রমাণ।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন হাতে গোনা কয়েকটি ট্রাক গাজায় ঢুকছে, যার খাবারের জন্য মানুষ লড়াই করছে এবং প্রাণ হারাচ্ছে।”

গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৯টি মরদেহ এবং ২২১ জন আহত ব্যক্তি গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৫ হাজার ৭০৬ জন নিহত ও ১ লাখ ৩০ হাজার ১০১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।