নেতানিয়াহুর নতুন ‘গণহত্যা’য় পশ্চিমা মদদ দেখছেন বিশ্লেষকরা 

মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদন 

প্রকাশ | ২১ জুন ২০২৫, ১৬:১৬

যাযাদি ডেস্ক
ফাইল ছবি: সংগৃহীত

ইরানের ওপর ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসনকে ‘আত্মরক্ষা’ হিসেবে বর্ণনা করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে আন্তঃসরকারি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফোরাম জি-৭ জোটের নেতারা। এ যৌথ বিবৃতিকে ‘অরওয়েলীয়’ ভাষাচালনা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, এই বিবৃতির মাধ্যমে ভাষাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিকৃত করে তাতে আগ্রাসনকে স্বাভাবিক করে তোলা হয়েছে। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের ধারাবাহিক লঙ্ঘনের জন্য ইসরায়েলকে কূটনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

মিডল ইস্ট মনিটরের বিশ্লেষণী প্রতিবেদন অনুযায়ী, পশ্চিমা এ বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে উপেক্ষিত হয়েছে গাজার ২৩ লাখ মানুষের ওপর ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ, লেবাননে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন কিংবা সিরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে চলা ইসরায়েলি বিমান হামলার বিষয়গুলো। এতে বোঝা যায়—পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো এখন সম্পূর্ণভাবে নেতানিয়াহুর সীমাহীন যুদ্ধনীতির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেছে।

এই সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান কংগ্রেসে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ করছে না।’ 

একই বক্তব্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাও। এই মূল্যায়নকে উপেক্ষা করে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান নিয়েছে পেশ্চিমা দেশগুলো। যা মূলত পারমাণবিক প্রযুক্তির ওপর পশ্চিমা শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা থেকে উৎসারিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরাইলি হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ। বিশেষ করে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা নিষিদ্ধ। কোনো সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম প্ল্যান্টে হামলার ফলে বিপুল তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যা মানুষের মৃত্যু, ভূগর্ভস্থ পানি, কৃষিভূমি ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে। একে কার্যত একটি পারমাণবিক হামলা বলেই বিবেচনা করা যেতে পারে।

তবে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক স্থাপনার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, একই ধরনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ইরানের ক্ষেত্রে ইসরাইলের হামলাকে ‘আত্মরক্ষা’ বলে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। এই দ্বিচারিতা শুধু নৈতিক অন্ধতা নয়, বরং ইতিহাসবাহী ঔপনিবেশিক মনোবৃত্তির ফল। যে সভ্যতা দাস ব্যবসা, আদিবাসী গণহত্যা, কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ, হলোকাস্ট এবং পারমাণবিক হামলার জন্ম দিয়েছে, সেই পশ্চিমা ‘সভ্যতা’ই আজ ইসরাইলকে অস্ত্র, স্যাটেলাইট গোয়েন্দা তথ্য ও কূটনৈতিক আশ্রয় দিয়ে গাজায় শিশু হত্যা এবং ইরানে পারমাণবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের ভাষায়, ‘ইসরাইল আমাদের হয়ে নোংরা কাজটা করে দিচ্ছে।’ এই বক্তব্য ইসরাইল-পশ্চিম সম্পর্কের বাস্তবতাকে নগ্নভাবে উন্মোচন করেছে।

নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মার্কিন প্রভাবশালী লবি ট্রাম্প প্রশাসনকে ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। তাদের বিশ্বাস, ইসরা্িল এরই মধ্যে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পর্যাপ্ত দুর্বল করেছে—এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকি কম। 

ট্রাম্পের অহংবোধকে খোঁচা দিয়ে, ‘ইসরাইলের ত্রাণকর্তা’ হিসেবে ইতিহাসে জায়গা পাওয়ার লোভ দেখিয়ে নেতানিয়াহু হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন এক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারেন।

২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের মতো, এবারও নেতানিয়াহু ও তার ‘ইসরায়েল ফার্স্ট’ নীতিতে বিশ্বাসী প্রভাবশালী মহল যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি বিপর্যয়কর যুদ্ধে ঠেলে দিতে পারে। সেসময় যেমন গণতন্ত্রের নামে ইরাককে ধ্বংস করা হয়েছিল, এবারও একই কৌশলে ইরানকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর নৈতিকহীন আগ্রাসনের সংমিশ্রণ মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে।