ন্যাটোর  শীর্ষ সম্মেলন, গুরুত্ব পাচ্ছে মতবিরোধ ভুলে ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট রাখা!

প্রকাশ | ২১ জুন ২০২৫, ১৯:৩১

যাযাদি ডেস্ক
collected

 

 

নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে দুই দিনব্যাপী (২৪ ও ২৫ জুন) শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা জোট ন্যাটো। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা একমাত্র ব্যক্তি—যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।


বিবিসির বিশ্লেষণী প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩২টি সদস্য দেশের নেতা ও ডজনখানেক সহযোগী রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন এ সম্মেলনে। কিন্তু সম্মেলনের সময় কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র তিন ঘণ্টা, বিবৃতি সংক্ষিপ্ত করে আনা হয়েছে পাঁচ প্যারাগ্রাফে। লক্ষ্য একটাই— মতবিরোধ ঢেকে ফেলে ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট রাখা।


জোটের নতুন মহাসচিব মার্ক রুটে তার প্রথম নাটো সম্মেলনটিকে ঝামেলামুক্ত রাখতে চান। তাই ট্রাম্পের দাবি মেনে ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয়ে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে যাচ্ছে।

হেগে আয়োজিত এবারের নাটো সম্মেলনকে ঘিরে ডাচ নিরাপত্তা বাহিনী ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করেছে। সম্মেলনের ব্যয় প্রায় ১৮ কোটি ৩৪ লাখ ইউরো। ন্যাটোর ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল সম্মেলন এটি।

এই জোটের প্রতিটি সম্মেলনে প্রধান লক্ষ্য কিছুটা ‘পূর্বনির্ধারিত’—সংঘবদ্ধতার বার্তা দেয়া। তবে এবার মূল আলোচনার ফোকাস অনেকটা নির্ধারণ করেছেন ট্রাম্প নিজেই। তার চাপে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ৫ শতাংশ জিডিপি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর অঙ্গীকার করছে, যদিও রুটে আপাতত ৩ দশমিক ৫ শতাংশ সরাসরি প্রতিরক্ষা ও ১ দশমিক ৫ শতাংশ পরোক্ষ ব্যয় মিলে মোট ৫ শতাংশের প্রস্তাব দিয়েছেন।

এই হিসাবের ভেতর অবকাঠামো নির্মাণ, যেমন সেতু বা রেললাইন—এসবও ঢুকিয়ে দেওয়ার কথা বলায় অনেকে বলছেন, এটি হবে "কাঠামোগত হিসাববিজ্ঞান"।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের উপস্থিতি এতটাই প্রভাবশালী যে বেশিরভাগ বিতর্কিত ইস্যু—যেমন ইউক্রেন যুদ্ধ বা রাশিয়ার প্রতি কৌশলগত অবস্থান—সেগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি ন্যাটোর নর্থ আটলান্টিক কাউন্সিলের মূল আলোচনায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রাখা হয়নি। শুধু নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত কার্ট ভলকার স্বীকার করেছেন, ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন নীতিতে বিভেদ তৈরি হয়েছে। ইউরোপ ইউক্রেনকে নিরাপত্তার মূল অংশ মনে করলেও, ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে সেটি গুরুত্বহীন।

২০১৬ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হয়ে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেবার কম প্রতিরক্ষা ব্যয় বরাদ্দের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে তুলোধুনো করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, তারা ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঋণী’। এবারও সেই বার্তাই বহাল রয়েছে।

ন্যাটোর নতুন প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা গোপন থাকলেও রুটে সম্প্রতি বলেন—রাশিয়া আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ন্যাটোর যে কোনো সদস্য দেশে আক্রমণ করতে পারে। সে অনুযায়ী নাটো চায়—৪০০ শতাংশ বেশি আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা, হাজার হাজার নতুন ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান আর কয়েক মিলিয়ন অতিরিক্ত কামানের গোলা।

এই প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে রাশিয়ার আশপাশের দেশগুলো—যেমন পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও লিথুয়ানিয়া—ইতিমধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়ে ৫ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে। সুইডেন সেনাবাহিনী দ্বিগুণ করতে চায়, জার্মানি বাড়াতে চায় ৬০ হাজার সৈন্য।

তবে ন্যাটোর অন্য অনেক সদস্য এখনো ২ শতাংশ জিডিপির পুরনো লক্ষ্যই পূরণ করতে পারেনি। যেমন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী এই নতুন ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রাকে "অযৌক্তিক ও প্রতিবন্ধক" বলে আখ্যা দিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের উপস্থিতি ন্যাটোর ঐক্যের ছবি অনেকাংশে ঢেকে দিচ্ছে। যদিও প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো নিয়ে তার চাপ ইউরোপকে বাস্তব কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বাধ্য করছে। তবে এই ব্যয় বৃদ্ধি আদতে কার্যকর কোনো প্রস্তুতি কিনা, না কি কেবল মার্কিন চাপের কাছে মাথানত, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।