ইরানে অনুপ্রবেশ করেছে ইসরায়েলি গোয়েন্দারা! গোপনীয় স্থানে খামেনি

সুরক্ষা দিচ্ছে শীর্ষ ইউনিট

প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৫, ১৫:২৭ | আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ১৬:২৩

যাযাদি ডেস্ক
ছবি সংগৃহীত

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে অতি গোপনীয় নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে শীর্ষ একটি ইউনিট সুরক্ষা দিচ্ছে। গোপন রাখা হয়েছে তাদের পরিচয়। এমনকি ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও জানেন না ওই শীর্ষ ইউনিটে কারা রয়েছেন। এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ।

এদিকে, ধারণা করা হচ্ছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা দেশটির বিভিন্ন স্থানে অনুপ্রবেশ করেছে। এ কারণেই এই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। 

এক ইরানি কর্মকর্তা বলেন, ‘খামেনি বাংকারে নেই। তবে তার জীবন বিপদের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ একটি ইউনিট তার সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে কেউ অবগত নন। এটি করা হয়েছে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর স্বার্থে।’

খামেনি বহু আগে থেকেই বলে আসছেন, ইসরায়েল তার প্রাণ হরণের চেষ্টা করতে পারে। সম্প্রতি ইসরায়েল হামলা চালিয়ে অন্তত ১১ জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং ১৪ জন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করায় খামেনির প্রাণনাশের ঝুঁকি অন্য সময়ের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন বলছে, গত বৃহস্পতিবার বির শেভা হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে খামেনির মৃত্যু চাওয়া হচ্ছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু খামেনিকে হত্যাচেষ্টার বিষয়টি বাতিল করছেন না। তিনি মনে করছেন, এটা ঘটলে এই সংঘাতের অবসান হতে পারে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ খামেনিকে ‘আধুনিক হিটলার’ তকমা দিয়ে বলেছেন, ‘তাকে বাঁচতে দেওয়া চলে না।’ এর আগে খবর এসেছিল, খামেনিকে ইসরায়েল হত্যা করতে চাইলেও তাতে সায় দেননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

ট্রাম্পও একাধিকবার হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জানি কোথায় কথিত সেই সর্বোচ্চ নেতা লুকিয়ে আছেন।’ 

তবে ট্রাম্প এটিও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এখন খামেনিকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নেই। আপাতত এখন এ রকম কিছু করা হচ্ছে না। তবে তিনি (ট্রাম্প) যদি মত পরিবর্তন করেন তাহলে খামেনি খুব ‘সহজ লক্ষ্য’ হয়ে উঠতে পারেন। 

ইরানের ৮৬ বছর বয়সী নেতা খামেনি তেহরানের ডিস্ট্রিক্ট ১১-এর লিডারশিপ হাউস কমপ্লেক্সে বসবাস করছিলেন। তবে এখন যে ভিডিওগুলো প্রকাশিত হচ্ছে, সেগুলো দেখে মনে হয় তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।

তিনি এখন কথা বলেন বাদামি একটা পর্দার সামনে বসে। কখনো তার পেছনে ইরানে ১৯৭৯ সালে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটানো আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির ছবি থাকে। সচরাচর তিনি যে পরিবেশে থেকে বক্তব্য দেন, তার সঙ্গে এই পরিবেশের পার্থক্য আছে। 

ভিডিও বিশ্লেষকদের ধারণা, এই ভিডিও বক্তব্য মধ্য তেহরানের আইআরজিসির গণমাধ্যম কেন্দ্রে ধারণ করা হয়েছে। এতে এমনটাও ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আশপাশে কোথাও বসবাস করছেন বা ওই ভবনের নিচেই কোথাও আছেন। 

তেহরানে সাম্প্রতিক সময়ে রহস্যজনকভাবে বেশ কয়েকটি গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় উচ্চপদস্থ অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে খামেনি গাড়িতে করে শহরের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করবেন, এমনটা মনে করা হচ্ছে না। 

খামেনির সতর্কতা অবলম্বন করাটা স্বাভাবিক বলে মনে করছে দ্য টেলিগ্রাফ। কারণ, ইসরায়েলি গোয়েন্দা বাহিনীর নিজের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অন্য দেশে গিয়ে হত্যা এবং অপহরণের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সেই ১৯৬০ নালে আর্জেন্টিনা থেকে হলোকাস্ট-খ্যাত অটো অ্যাডলফ আইখম্যানকে অপহরণ করেছিল তারা।

‘প্রথমে হত্যা’ নীতিতে বিশ্বাসী ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। বিষয়টি যে শুধু তাদের সামরিক নথিতে রয়েছে তা নয়। এটি তাদের ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যেও রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে দ্য টেলিগ্রাফ। 

মোসাদ সাধারণত নিজেদের অভিযানের বিষয়ে জানায় না। তবে অন্তত ডজনখানেক রাষ্ট্রে গোয়েন্দা সংস্থাটি অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব দেশের মধ্যে ইউরোপেরও বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র রয়েছে। গত বছর লেবাননেও দূর থেকে পেজার ও ওয়াকিটকির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হিজবুল্লাহর অনেক সদস্যকে হত্যা করে মোসাদ। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ