সন্তানদের পড়ার খরচ যোগাতে লাইভে ‘পর্ন ভিডিও’
প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২৫, ১২:০১ | আপডেট: ২৮ জুন ২০২৫, ১২:১৬

‘সুইট তেলেগু কাপল ২০২৭'- এই নামেই ইনস্টাগ্রামে খোলা হয়েছিল পেজ। একবার সেখানে ঢুকলেই মেসেজে হাতছানি, 'আমাদের নগ্ন ভিডিয়ো দেখতে চান? নীচের নম্বরে টাকা পাঠালেই মিলবে হাতে গরম ভিডিয়ো লিঙ্ক।' ধাপ্পাবাজি নয় মোটেই! টাকা দিয়ে সত্যিই সেক্স ভিডিয়ো পেয়েছেন অসংখ্য সাবস্ক্রাইবার।
ব্যাপারটা ভাইরাল হতেই শুরু হয় তদন্ত, আর তার সূত্র ধরে সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন হায়দরাবাদের এক অটোচালক এবং তাঁর স্ত্রী। কিন্তু একটা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাপোষা দম্পতি হঠাৎ এমন একটা পথ বেছে নিতে গেলেন কেন? সেখানেই লুকিয়ে গল্পের আসল মোড়! দম্পতিকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছেন, তাঁদের দুই মেয়ে পড়াশোনায় খুব ভালো।
এক মেয়ে বি.টেক দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় ৪৭০ নম্বরের মধ্যে ৪৬৮ স্কোর করেছেন তিনি।
মেধাবী মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন বাবা-মা। কিন্তু অটো চালানোর টাকায় মেয়েদের কলেজের ফি, টিউশনের খরচ জোগানো আর সম্ভব হচ্ছিল না। তার উপর অটোচালক নিজেই অসুস্থ, তাঁর চিকিৎসার খরচও কম নয়। অল্প সময়ে বেশি টাকা কামানোর রাস্তা হিসেবে 'সেক্স ভিডিয়ো 'কেই তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন বলে দাবি দম্পতির! যদিও মেয়েরা বাবা-মায়ের এই 'কীর্তি'র কথা জানতেন কি না, সেটা স্পষ্ট নয়।
তবে হঠকারিতায় এই সিদ্ধান্ত নেননি হায়দরাবাদের মধ্য চল্লিশের এই দম্পতি। রীতিমতো আটঘাট বেঁধেই ময়দানে নেমেছিলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদের মল্লিকার্জুন নগর থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তল্লাশি চালিয়ে দম্পতির বাড়ির ছাদে একটা অস্থায়ী স্টুডিয়োর সন্ধান পুলিশ। সেখানেই হতো সেক্স ভিডিয়োর শ্যুটিং।
ওই স্টুডিয়ো থেকে একাধিক হাই-ডেফিনেশন ক্যামেরা এবং বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন, দু'টি ট্রাইপড এবং বেশ কিছু ইলেকট্রনিক সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত এক দম্পতি কোথা থেকে এত দামি ক্যামেরা পেলেন, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মহিলার অবশ্য দাবি, গত চার মাস ধরে অনলাইনে নিজেদের সেক্স ভিডিয়ো বেঁচে ভালোই রোজগার করেছেন তাঁরা।
তা থেকেই এইচডি ক্যামেরা কিনেছেন, যাতে ভিডিয়ো কোয়ালিটি আরও ভালো হয়। নিজেদের পরিচয় গোপন করার জন্য ভিডিয়োয় মাস্ক পরে থাকতেন স্বামী-স্ত্রী। তবে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাঁদের বাড়িতে রেইড করে ইস্ট জোন টাস্ক ফোর্স, তার পরেই পর্দাফাঁস!
তদন্তে জানা গিয়েছে, ইনস্টাগ্রামেই খদ্দের ধরতেন ওই দম্পতি। সাবস্ক্রাইবাররা লাইভ ভিডিয়ো পেতেন দু'হাজার টাকায় আর রেকর্ডেড সেক্স ভিডিয়ো মিলত ৫০০ টাকায়। সাবস্ক্রাইবারদের অধিকাংশই অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে। আইটি অ্যাক্টের একাধিক ধারায় দায়ের হয়েছে মামলা।
যারা সেক্স ভিডিয়ো কিনেছিল, তাদেরও নোটিস পাঠাচ্ছে পুলিশ। নিয়ম মেনে নোটিশ পাঠানো হয়েছে দম্পতির দুই মেয়েকেও। ওই দম্পতি কোনও সেক্স র্যাকেটের অংশ কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে 'সুইটি তেলুগু কাপল'-এর গ্রেপ্তারির খবর ছড়াতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের অনেকেরই বক্তব্য, মেয়েদের পড়াশোনার জন্য এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন দম্পতি। তাঁরা অন্যায় করলে শাস্তি পাওয়াই উচিত, কিন্তু সেক্ষেত্রে তাঁদের দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগানোর দায়িত্ব নিক সরকার। প্রশাসনের তরফে অবশ্য তেমন কোনও আশ্বাস মেলেনি।