প্রিন্সেস ডায়ানাকে ভালোবেসে নিজের করে নিতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প

প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২৫, ১৫:৫৫ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫, ১৬:২৩

যাযাদি ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্প নব্বইয়ের দশকে, প্রিন্সেস ডায়ানার প্রতি আচ্ছন্ন ছিলেন এবং তাকে নিজের করে নিতে চেয়েছিলেন। ডায়ানার সঙ্গে তার সম্পর্কের সম্ভাবনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা খবর প্রকাশিত হয়েছে। 

বিশেষ করে, ১৯৯৬ সালে রাজপুত্র চার্লসের সঙ্গে ডায়ানার বিবাহবিচ্ছেদের পর ট্রাম্প নাকি তাকে ‘সর্বশেষ ট্রফির’ মর্যাদা দিয়ে ‘স্ত্রী’ হিসেবে পাওয়ার চেষ্টা করেন।

প্রয়াত রাজকুমারীর মৃত্যুর ২৮ বছর পরও তার প্রতি এই আমেরিকান ধনকুবেরের আবেগ আজও মানুষের চর্চার বিষয়। বিশেষ করে ,প্যারিসে নটরডেম ক্যাথেড্রালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রিন্স উইলিয়ামের সাক্ষাতের পর থেকে এই গল্পটি নিয়ে আবারও বেশ আলোচনা হচ্ছে।

তাছাড়া,ব্যাপারটি প্রিন্সেস ডায়ানার বন্ধু এবং বিবিসি সংবাদদাতা সেলিনা স্কটের লেখা একটি নিবন্ধে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০০ সালে ‘হাওয়ার্ড স্টার্ন শো’-নামের এক রেডিও সাক্ষাৎকারে, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেসময়ে বলেন, ওয়েলসের রাজকুমারী তার 'দশটি সবচেয়ে সুন্দরী নারীর' তালিকায় ছিলেন।

এর আগে, ট্রাম্প নিজেই ‘নারী বিষয়ে’ তার একমাত্র আক্ষেপের কথা স্বীকার করেন। সেখানেও ডায়ানা স্পেন্সারের প্রতি তার দুর্বলতার কথা উঠে আসে। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ‘দ্য আর্ট অব দ্য কামব্যাক’ বইয়ে ট্রাম্প লেখেন, ‘লেডি ডায়ানা স্পেনসারকে কখনো আমি মন দিয়ে ভালোবাসার সুযোগই পেলাম না।’ 

তিনি আরও লেখেন, ‘আমি তাকে বেশ কয়েকবার দেখেছি। আমি লক্ষ করেছি, তিনি কীভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করতেন। তার উপস্থিতিতেই গোটা ঘর উজ্জ্বল হয়ে উঠত। তিনি ছিলেন সত্যিকারের রাজকন্যা-স্বপ্নের মতো একজন নারী।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসের কলামে ডায়ানার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বিবিসির সাবেক সাংবাদিক সেলিনা স্কট লেখেন, ট্রাম্পের পাঠানো বিশাল ফুলের তোড়া নিয়মিত ডায়ানার কেনসিংটন প্যালেসের বাসায় পৌঁছাত। 

সেখানে স্কট লিখেন, ‘ট্রাম্প ডায়ানাকে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রফি হিসেবে দেখতেন। সে সময় ট্রাম্পের পক্ষ থেকে প্রতিদিন মূল্যবান গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাপ আর অর্কিড প্রিন্সেসের অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছাত। এতে ডায়ানা বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তার মনে হচ্ছিল, যেন ট্রাম্প তাকে অনুসরণ বা উত্ত্যক্ত করছেন। এরপর এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিতে হবে সে সম্পর্কে সে তার এক বন্ধুর কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন।’

একদিন ব্যক্তিগত নৈশভোজে ডায়ানা সেলিনা স্কটকে জানান, ‘আমি কী করব? উনি আমাকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছেন।’ সেলিনা জবাব দেন, ‘ফুলগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দাও।’ ডায়ানা হেসে ওঠেন।

এরপর, ১৯৯৭ সালে প্যারিসে ডায়ানার মৃত্যুর পর ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠজনদের বলেন, তার সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হলো ডায়ানার সঙ্গে তিনি প্রেম করতে পারেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন, ডায়ানার সঙ্গে তার রোমান্স হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ডায়ানার সঙ্গে কয়েকবার দেখা ছাড়া তাদের মধ্যে আর কোনো ঘনিষ্ঠতা হয়নি। তবে ডায়ানার মৃত্যুর পরও ট্রাম্প তার কথা ভুলতে পারেননি।

১৯৯৭ সালে ডায়ানার শেষকৃত্যের কয়েক মাস পর হাওয়ার্ড স্টার্নের রেডিও শোতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, সুযোগ পেলে তিনি ডায়ানার সঙ্গে সম্পর্কে যেতেন। স্টার্ন জিজ্ঞাসা করেন, ‘মানুষ কেন ভাবে, তুমি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছ যে, তুমি লেডি ডায়ানাকে পেতে পারতে?’ জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, পারতাম।’ 

২০০০ সালের  শুরুর দিকে আরেক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আবারও জানান, কোনো দ্বিধা ছাড়াই তিনি ডায়ানার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে যেতে রাজি ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি তার ‘টপ টেন’ সবচেয়ে আকর্ষণীয় নারীর তালিকায় ডায়ানাকে তৃতীয় স্থানে রাখেন। তালিকায় দ্বিতীয় ছিলেন তার সাবেক স্ত্রী ইভানা এবং প্রথম স্থানে বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া।

ডায়ানাকে নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি একটু পাগল ছিলেন, তবে এটা তেমন বড় ব্যাপার নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলছি, তিনি অসাধারণ ছিলেন। লেডি ডায়ানা সত্যিকারের রূপসী নারী ছিলেন। আমি তাকে কয়েকবার দেখেছি। মানুষ বুঝতেই পারেনি, তিনি এতটা সুন্দর। তিনি ছিলেন সুপার মডেলদের মতো। তার উচ্চতা, সৌন্দর্য, ত্বক—সবকিছু ছিল অবিশ্বাস্য।’

এমন মন্তব্যের পরও ডায়ানার ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ট্রাম্পের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে শিষ্টাচার বজায় রেখেছেন, সেটাই বিস্ময়কর। ২০১৯ সালের যুক্তরাষ্ট্র সফরে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নটর ডেম দে প্যারিসের পুনরোদ্বোধনে এবং ২০২৫ সালের এপ্রিলে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উইলিয়াম ট্রাম্পের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

উইলিয়াম হয়তো জানতেন, তার মা ডায়ানা ট্রাম্প সম্পর্কে কী ভাবতেন।

২০২৩ সালে ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি এমন একটি বই প্রকাশ করতে যাচ্ছেন, যেখানে বিশ্বনেতা, রাজনীতিবিদ ও সেলিব্রিটির লেখা চিঠি থাকবে। তাদের মধ্যে প্রিন্সেস ডায়ানাও আছেন।