গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় সহযোগী ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ
প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮:৩৩ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮:৩৯

ইসরায়েলের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সংগ্রহ বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহ কর্মসূচির অংশ, যেখানে আটটি দেশের কমপক্ষে ১,৬০০ কোম্পানি জড়িত। এই কর্মসূচির নেতৃত্বে আছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লকহিড মার্টিন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে ইতালির লিওনার্দো এস.পি.এ, আর অস্ত্র তৈরির জন্য রোবোটিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে জাপানের ফানুক কর্পোরেশন।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতকরণ ও গাজায় চলমান গণহত্যায় ইসরায়েলকে সহায়তাকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মানচিত্র তৈরি করে একটি নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার পরিস্থিতি সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। এ কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। খবর আল জাজিরা।
জেনেভায় বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। এতে ৪৮টি করপোরেট সংস্থার নাম প্রকাশ করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট, গুগলের প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনক, অ্যামাজন। তদন্তের অংশ হিসেবে ১,০০০টিরও বেশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের একটি ডেটাবেসও তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের এই চিরস্থায়ী দখলবাদ অস্ত্র নির্মাতা ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি আদর্শ পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছে। বিপুল সরবরাহ ও চাহিদা, নজরদারি নেই বললেই চলে, এবং জবাবদিহিতা একেবারেই শূন্য হওয়ায় বিনিয়োগকারী, ব্যক্তিগত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অবাধে মুনাফা করছে। কোম্পানিগুলো এখন আর শুধু দখলের সঙ্গে জড়িত নয়। তারা গণহত্যার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অংশ হয়ে উঠেছে।' গাজা যুদ্ধ অনেকের জন্য লাভজনক হওয়ায় সেখানে গণহত্যা সংগঠিত হতে পারছে বলে প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসরায়েলের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সংগ্রহ বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহ কর্মসূচির অংশ, যেখানে আটটি দেশের কমপক্ষে ১,৬০০ কোম্পানি জড়িত। এই কর্মসূচির নেতৃত্বে আছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লকহেড মার্টিন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে ইতালির লিওনার্দো এস.পি.এ, আর অস্ত্র তৈরির জন্য রোবোটিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে জাপানের ফানুক করপোরেশন।
প্রযুক্তি খাতে, মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট ও অ্যামাজন ইসরায়েলকে তাদের ক্লাউড ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে প্রায়-সরকারি পর্যায়ের প্রবেশাধিকার দিয়েছে। যা ইসরায়েলি বাহিনীর ডেটা বিশ্লেষণ ও নজরদারির সক্ষমতা বাড়িয়েছে। এই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারি ও বৈষম্যমূলক পারমিট ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে।
আন্তর্জাতিক বিজনেস মেশিন করপোরেশন (আইবিএম) সামরিক ও গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলের অভিবাসন ও সীমান্ত কর্তৃপক্ষের কেন্দ্রীয় বায়োমেট্রিক ডেটাবেজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে প্যালানটিয়ার টেকনোলোজিস নামের একটি মার্কিন সফটওয়্যার কোম্পানি।
গৃহনির্মাণ ধ্বংস ও অবৈধ বসতি নির্মাণে সহায়তাকারী ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ক্যাটারপিলার, লিওনার্দো-মালিকানাধীন রাডা ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রিজ, দক্ষিণ কোরিয়ার এইচডি হুন্দাই এবং সুইডেনের ভলভো গ্রুপ। অবৈধ ইসরায়েলি বসতিতে হোটেল ও আবাসন সুবিধা দিয়েছে বুকিং ডট কম ও এয়ারবিএনবি।
যুক্তরাষ্ট্রের ড্রামন্ড ও সুইজারল্যঅন্ডের গ্লেনকো ইসরায়েলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা কয়লা সরবরাহ করেছে। কৃষি খাতে, চীনের ব্রাইট ডেইরি ফুড ইসরায়েলের বৃহত্তম খাদ্য কোম্পানি টিনোভার মালিকানা ধরে রেখেছে, যার লাভ আসে ফিলিস্তিনি জমি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ আউটপোস্ট থেকে আসে। অবৈধ ইসরায়েলি বসতিতে পানি সরবরাহ করে ম্যঅক্সিকোর মালিকাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।
আর অর্থায়নের ক্ষেত্রে, ফরাসি ব্যাংক বিএনপি পারিবাস ও যুক্তরাজ্যের বার্কলেসসহ বিশ্বের বৃহত্তম কিছু আর্থিখ প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের যুদ্ধ ব্যয় কম সুদে পরিচালনা করতে সাহায্য করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইসরায়েলকে সহায়তাকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে প্রধান বিনিয়োগকারী হিসেবে উঠে এসেছে ব্ল্যাকরক ও ভ্যানগার্ডের মতো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম। মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, আলফাবেট, আইবিএম, লকহিড মার্টিনের প্রধান বিনিয়োগকারী ব্ল্যাকরক।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবৈধ দখলদারী প্রকল্প ও গণহত্যাগুলো ঐতিহাসিকভাবে করপোরেট খাত দ্বারা চালিত হয়েছে। যারা আগে দখলদারি অর্থনীতিতে লাভ করত, তারা এখন সরাসরি গণহত্যার অর্থনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক ব্যয় ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে ৬৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ১৭৯ শতাংশ বেড়ে ১৫৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য যোগ করেছে।
আলবানিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করপোরেট সংস্থাগুলো সরাসরি বা বাণিজ্যিক সম্পর্কের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত হলে তাদের দায়বদ্ধতা আছে। প্রতিটি কোম্পানিকে তার কার্যক্রম ও ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব মূল্যায়ন করতে হবে। ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়ে অপরাধমূলক দায়বদ্ধতা তৈরি হতে পারে।