কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতেই কেন ইরানের হামলা!
প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯:০২

মধ্যপ্রাচ্যের কমপক্ষে ১৯টি স্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনা বা ঘাঁটি আছে। ঘাঁটিগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ইসরায়েল, জর্ডান, কুয়েত, কাতার এবং সিরিয়ায়।
ইরান-ইসরাইল সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। ইরানও পাল্টা হামলা চালায় কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে।
কিন্তু ইরান কেন কাতারেই ঘাঁটিতেই হামলা চালায়, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা নানা দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
উপসাগরীয় অন্য দেশের মার্কিন স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু না করার বিষয়ে ইরানের সাবেক নৌ কর্মকর্তা হুসেইন আরিয়ান বিবিসিকে জানান, বাহরাইনের খলিফা বিন সালমান বন্দরের মতো নৌঘাঁটিতে আঘাত করা ইরানের জন্য অত্যন্ত কঠিন, যেখানে মার্কিন পঞ্চম নৌবহর ও মার্কিন নৌ-কেন্দ্রিক কমান্ড অবস্থিত, ‘কারণ এটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং কাতারের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত আল উদেইদ ঘাঁটির তুলনায় অনেক ছোট।’
অনেক বিশ্লেষকের মতে, ইরান চাইছিল যুক্তরাষ্ট্রকে পরমাণু আক্রমণের জন্য প্রতিকার এবং তাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে একটি ‘নির্বিকল্প ও প্রতীকী’ বার্তা পাঠাতে। তাই তারা একটি সংঘাতবিহীন, পরিকল্পিত ও কিছুটা নাটকীয় হামলা-যা কেবল ‘সীমিত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে দেখানো যায়। স্থিতি ভারসাম্য বজায় রেখেই তারা মেসেজ দিতে চেয়েছে: ‘আমরা হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম এবং এরপর পিছু হটব না।’
ইরান এই ঘাঁটিতে হামলা চালানোর অন্যতম একটি কারণ হতে পারে- কাতারে অবস্থিত এই ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক কেন্দ্র। বৃহৎ এই ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ইরান তার সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখেছে।
ইরানের ‘সীমিত প্রতিক্রিয়া’ এ কারণে যে, এই হামলার আগেই মার্কিন কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছিল ইরান। যে কারণে এই হামলায় প্রাণহানি বা ব্যাপক ধ্বংস এড়ানো সম্ভব হয়েছে। আরও কারণগুলোর মধ্যে থাকতে পারে-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হ্রাস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক প্রভাব হ্রাস করার জন্য ইরান প্রায়ই মার্কিন সেনা ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করে। কাতারে মার্কিন সেনা ঘাঁটিটি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিগুলির মধ্যে একটি, যা ইরানের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এবং প্রতিষ্ঠাকে প্রতিফলিত করে। এই ঘাঁটিটিকে হয়রান করে ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রভাব হ্রাস করার চেষ্টা করতে পারে।
স্থানীয় রাজনৈতিক চাপ বাড়ানো
কাতার মধ্যেপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ এবং ইরানের সাথে এর সম্পর্ক মিশর, সৌদি আরব এবং আরব আমিরাতের মতো দেশগুলির থেকে ভিন্ন। ইরান সম্ভবত কাতারের মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে হামলার মাধ্যমে কাতারের রাজনৈতিক দাবিগুলিকে সমর্থন করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ককে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি চাপ সৃষ্টি
সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারের মার্কিন সেনা ঘাঁটিকে হয়রান করার জন্য সবচেয়ে বেশি মনোযোগী দেশগুলির মধ্যে একটি। ইরান সম্ভবত এই ঘাঁটিতে হামলার মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ককে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
ইসলামিক স্টেট এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায় স্বীকার করা
ইরান সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসলামিক স্টেট এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করার জন্য দায়ী করতে চায়। কাতারে মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে হামলার মাধ্যমে ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই দায়ে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করতে পারে।
স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম করা
ইরান সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতিকে প্রতিহত করার জন্য স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম করছে। কাতারে মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে হামলার মাধ্যমে ইরান এই সংগ্রামকে সমর্থন করার চেষ্টা করতে পারে।
সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা ও এআই