ফ্লাইটে ধস্তাধস্তির ভিডিও ভাইরাল, ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুবক গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২৫, ১০:২২

যাযাদি ডেস্ক
ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুবক

আমেরিকার একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুবক মধ্য আকাশে সহযাত্রীর গলা চেপে ধরেন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই ব্যক্তি পরস্পরের গলায় হাত দিয়ে ধস্তাধস্তি করছেন। যাত্রীরা আতঙ্কে চিৎকার করে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন।

ঘটনাটি ঘটে ৩০ জুন, ফিলাডেলফিয়া থেকে মিয়ামি যাওয়ার ফ্রন্টিয়ার এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে। আক্রান্ত যাত্রীর নাম কিয়ানু ইভান্স, আর অভিযুক্ত যুবকের নাম ঈশান শর্মা (২১)। তিনি নিউয়ার্কের বাসিন্দা।

ভিডিওতে দেখা যায়, দুই যাত্রীর মধ্যে গলা চেপে ধরার মতো মারাত্মক মারামারি চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈশান শর্মা হঠাৎ করে উঠে এসে ইভান্সের গলায় হাত দেন। ইভান্স বলেন, এটি অকারণে ও অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে।

ইভান্স পুলিশকে জানান, ঈশান আচরণ করছিলেন অস্বাভাবিকভাবে। তিনি বলছিলেন, "হা হা হা হা... তুমি একজন পুঁচকে মর্টাল মানুষ, আমাকে চ্যালেঞ্জ করলে মৃত্যুর মুখোমুখি হবে।" তাদের বসার জায়গার মধ্যে ঈশান ঠিক পেছনের আসনে ছিলেন।

এরপর ইভান্স ওয়াশরুমে যান এবং ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের বিষয়টি জানান। তারা বলেন, এমন কিছু হলে তিনি যেন ‘অ্যাসিস্টেন্স বাটন’ চাপেন।

ইভান্স জানান, ফিরে আসার পর ঈশান আবারও তাকে মৃত্যুর হুমকি দিতে থাকেন। তখন তিনি সহায়তার বাটন চাপেন।
পরবর্তীতে ঈশান তাকে গলার কাছ থেকে চেপে ধরেন।

ইভান্স বলেন, "আমি তার সঙ্গে চোখে চোখ, কপালে কপাল লাগিয়ে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ সে আমার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করতে থাকে। এটা ছিল ফাইট-অর-ফ্লাইট মুহূর্ত। বিমানের মতো সংকীর্ণ জায়গায় নিজেকে বাঁচানো ছাড়া উপায় ছিল না।"

বিমান মিয়ামি বিমানবন্দরে অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গেই ঈশান শর্মাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যাটারি চার্জে মামলা করা হয়।

ঘটনার পরে ঈশান শর্মাকে আদালতে হাজির করা হয় মঙ্গলবার। সেখানে তার পক্ষে আইনজীবী এক চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দেন, যা ঘটনাটিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে।

আইনজীবী বলেন, “আমার মক্কেল যে ধর্মে বিশ্বাস করেন যেখানে ধ্যান (মেডিটেশন) একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন। তিনি বিমানে বসে ধ্যান করছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তার পেছনের আসনে বসা যাত্রী বিষয়টি সহ্য করতে পারেননি এবং বিরক্তি প্রকাশ করেন।”

ঈশানের পক্ষের দাবি, তিনি যখন ধ্যানে নিমগ্ন ছিলেন, তখন তার মুখভঙ্গি, নিঃশ্বাসের শব্দ কিংবা ধ্যানের সময়ের আচরণ পেছনের যাত্রীর কাছে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু সেটি ছিল একান্তই আধ্যাত্মিক অনুশীলন। পেছনের যাত্রী কিয়ানু ইভান্স এর প্রতিবাদ করেন, এবং এরপরই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা শেষ পর্যন্ত ধস্তাধস্তি পর্যন্ত গড়ায়।

ঈশানের আইনজীবীর বক্তব্য অনুযায়ী, এই ঘটনার পুরো প্রেক্ষাপটকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি কোনো ইচ্ছাকৃত আক্রমণ নয়, বরং ধর্মীয় আচরণের ভুল ব্যাখ্যার ফলাফল।

তবে এই দাবির সঙ্গে ইভান্সের অভিযোগ একেবারেই মেলেনি। তিনি বলেন, ঈশান শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক আচরণ করছিলেন, এবং তাকে বারবার "মর্টাল", "মরণ হবে", "চ্যালেঞ্জ করলে মৃত্যু নিশ্চিত" ইত্যাদি অদ্ভুত কথা বলছিলেন।