ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল-সৌদির ‘গোপন তৎপরতা’, তথ্য ফাঁস

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৫:১৫ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৬:৩৪

যাযাদি ডেস্ক
ইসরায়েল ও সৌদি আরবের পতাকা। ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের আরেক মুসলিম দেশ ইরানে ইসরায়েল হামলা চালায়। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে সৌদি। তবে ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম ‘ইসরায়েল হাইয়োম’ বলছে ভিন্ন কথা। সংবাদমাধ্যমটি তথ্য প্রকাশ করেছে যে, এই সংঘাতের সময় সৌদি আরব ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সঙ্গে গোপন তৎপরতা চালিয়ে গেছে। 

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমটির বরাতে প্রেস টিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরব গোপনে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ইরানি ড্রোন প্রতিরোধে অংশ নিয়েছে। ১২ দিনব্যাপী ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ইরান থেকে ছোড়া বহু ড্রোন ইরাক ও জর্ডানের আকাশসীমা পেরিয়ে ইসরায়েলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। 

তবে সৌদি বিমানবাহিনী হেলিকপ্টার পাঠিয়ে এসব ড্রোনকে আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে এসব ইসরায়েল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।

রিয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিরোধে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেনি। বরং তারা ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসনের জন্য নিন্দা জানিয়েছিল। এর আগে রিয়াদের শীর্ষ কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ভূখণ্ডে আক্রমণাত্মক কোনো হামলার জন্য সৌদি আকাশসীমা খোলা হবে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান-ইসরায়েলের মধ্যকার এ সংঘাতে সৌদি আরব ছাড়াও জর্ডান, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স সহযোগিতা করেছে। পুরো অপারেশনটি পরিচালনা করেছে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড তথা সেন্টকম। 

সংস্থাটির কমান্ডার জেনারেল মাইক কুরিলা অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইউরোপীয় সামরিক বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করেছে।

প্রেস টাইম জানিয়েছে, জর্ডান ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে ড্রোন প্রতিহত করার কথা স্বীকার করেছে। ফ্রান্স বলেছে, তারা জর্ডানে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই অভিযানে অংশ নিয়েছে, তবে তারা ইসরায়েলের নাম এড়িয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে সরাসরি ও উসকানিমূলক হামলা চালায়। এতে ইরানের উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং সাধারণ নাগরিক নিহত হন। 

এর প্রায় এক সপ্তাহ পর, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে যুদ্ধে প্রবেশ করে। ইরান এ আচরণকে জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) গুরুতর লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে আসছে।

এসব হামলার জবাবে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলের বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনায় এবং কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়।

এরপর দুই দেশের মধ্যে ২৪ জুন ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ শেয়ার করা এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েল একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে চূড়ান্তভাবে সম্মত হয়েছে।  প্রাথমিকভাবে এই যুদ্ধবিরতি ১২ ঘণ্টা ধরে চলবে, এরপরই যুদ্ধকে সমাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হবে।’

ট্রাম্প আরও জানান, প্রথমে ইরান যুদ্ধবিরতি শুরু করবে, এরপর ১২ ঘণ্টা পর ইসরায়েলও আনুষ্ঠানিকভাবে এতে যোগ দেবে। মোট ২৪ ঘণ্টা পর এই ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বিশ্বব্যাপী সমাপ্ত হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।

তিনি লেখেন, যুদ্ধবিরতির সময় দুপক্ষই শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ বজায় রাখবে। আমরা ধরে নিচ্ছি, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে, যা অবশ্যই হবে। এ জন্য আমি ইসরায়েল ও ইরান উভয় দেশকে সাহস, ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার জন্য অভিনন্দন জানাই।