ভয়াবহ কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে ইরান!
আশঙ্কা পরমাণু বিশেষজ্ঞদের
প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৬:১৮

গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধের মধ্যে তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার পর ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে। এই অবস্থায় পশ্চিমা পরমাণু বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন, ইরান আবার ভয়াবহ কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে। যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্ফাহানে বাংকার বোমা হামলা চালায়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই হামলার পর বলেন, তিন কেন্দ্রে বাংকার বাস্টার বোমা নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে পশ্চিমা পরমাণু বিশেষজ্ঞরা ওই হামলাকে ইরানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ‘গুরুত্বপূর্ণ মোড়’ বলে অভিহিত করেছেন। এবিসি নিউজকে তারা বলেন, তাদের আশঙ্কা, হামলার পর ইরান পরমাণু ইস্যুতে আরও ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেবে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য তারা আরও গোপনীয় পথ অনুসরণ করতে পারে।
খবরে বলা হয়েছে, ইরান এখন ৫৭ বছরের পুরোনো পরমাণু বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। ১৯৬৮ সালে ১৯১টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী অনুস্বাক্ষরকারী দেশগুলো পরমাণু বোমা বানাতে পারবে না। তবে তারা শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু শক্তির ব্যবহার করতে পারবে। সর্বশেষ উত্তর কোরিয়া এনপিটি থেকে বেরিয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান ইতোমধ্যে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে যে, এনপিটি ইস্যুতে তারা দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের যে বিলটি পার্লামেন্টে পাস হয়েছিল, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান তাতে স্বাক্ষর করেছেন।
ফলে, বিলটি এখন আইনে পরিণত হয়েছে। এদিকে সহযোগিতা স্থগিতের যে সিদ্ধান্ত ইরান নিয়েছে, তাকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস।
গত বুধবার (২ জুন) ওয়াশিংটনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যে শব্দ ব্যবহার করতে পারি, সেটা হলো অগ্রহণযোগ্য। ইরান এমন একসময়ে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের পথ বেছে নিয়েছে, যখন আগের পথ পাল্টে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল।’
এর আগে, ইরান ২০১৫ সালে বিশ্বের কয়েকটি শক্তিধর দেশের সঙ্গে ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ নামে একটি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। তখন ক্ষমতায় ছিলেন বারাক ওবামা। ওই চুক্তিতে ইরানকে সীমিতভাবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এর বিনিময়ে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। তিনি ইরানের ওপর আবার অর্থনৈতিক অবরোধ বলবৎ করেন। সেই থেকে ইরানের সঙ্গে আরেকটি চুক্তি করার চেষ্টা চলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ইরানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিলেন। কিন্তু এখনো সেই চুক্তি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালু করলে যুক্তরাষ্ট্র আবার হামলা চালাবে। নিউজউইক ইরানি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইরানের জ্যেষ্ঠ কমান্ডাররা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি তারা দেশটির ওপর নতুন করে আক্রমণ চালায়, তাহলে তাদের ‘আরও কঠোর’ জবাব দেওয়া হবে।
গণমাধ্যম সংবাদদাতারা বলছেন, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি জোরদার করার হুমকি দেওয়ায় কার্যত কূটনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে মার্কিন-মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আরও বিস্তৃত সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির হুমকি তৈরি হয়েছে। সেই উত্তেজনায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত হতে পারে। ইরান মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র দেশগুলোতে আমেরিকান লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যেমনটি কাতারভিত্তিক আল-উদেইদ ঘাঁটিতে করেছিল তার গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে বোমা হামলার পর। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোর (আইআরজিসি) এবং ইরানি সশস্ত্র বাহিনী নতুন আক্রমণের বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করেছে।
ফার্স নিউজ এজেন্সির খবর অনুযায়ী, আইআরজিসির মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী মোহাম্মদ নায়েনি গত বুধবার বলেছেন, জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযানের চেয়ে ইরান ‘অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক এবং অভূতপূর্ব’ প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, আমেরিকা যদি নতুন করে আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে তার দেশ কূটনীতির পথে হাঁটবে। তার দেশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ইরানের সেনাবাহিনীপ্রধান মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘শত্রুদের দিক থেকে কোনো খারাপ কিছু ঘটলে আমাদের প্রতিক্রিয়া আগের চেয়ে আরও ভয়াবহ হবে।’
এই অবস্থায় সংকট সমাধানে কূটনীতি কীভাবে বিকশিত হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। কূটনৈতিক তৎপরতা সফল না হলে পরিস্থিতি আরও সংঘাতের দিকে যেতে পারে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস