হরিরামপুরে সাত বছর ধরে কোরআনের আলো ছড়াচ্ছেন মঞ্জুয়ারা বেগম
প্রকাশ | ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৩৭
প্রায় সাত বছর ধরে নিজ উদ্যোগে স্থানীয়দের কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন তিনি। সাত বছরে শিশু, কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সের কয়েকশ’ নারীকে তিনি কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। যেসব শিশু মক্তবে গিয়ে কোরআন শিক্ষা নেয়, তারাও শিখতে আসে তারা কাছে। যাদের কোরআন কেনার সামর্থ নেই, তাদের কোরআনও কিনে দেন তিনি। তার এমন উদ্যোগে খুশি এলাকাবাসী।
তিনি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গালা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আব্দুল মজিদের স্ত্রী মঞ্জুয়ারা বেগম (৫৬)।
প্রতিদিন জহুরের নামাজের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি কোরআন শিক্ষা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিনই ইউনিয়নের আলমদী, সাখিনী, গালা ও ঘুনি গালা গ্রামের ৬০-৭০ জন আসেন তার কাছে কোরআন শিক্ষা নিতে। এদের মধ্যে শিশু ছেলে, স্কুল-কলেজগামী কিশোরী, গৃহবধুসহ বয়স্ক নারীরাও রয়েছেন। সন্ধ্যার পরে স্বামীকে নিয়ে তিনি বের হন লোকজনকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে। কেউ কোনদিন অনুপস্থিত থাকলে তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেন। কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি তিনি সবাইকে নিয়মিত নামাজ পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন।
মঞ্জুয়ারা বেগম জানান, প্রায় সাত বছর পূর্বে বাড়ির পাশের এক গৃহবধু তার কাছে কোরআন শিখতে আসে। ওই গৃহবধুকে দেখে গ্রামের আরও কয়েকজন নারীও আসে তার কাছে কোরআন শিখতে। তাদের দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে একে একে আসতে থাকেন অনেকেই। সবাইকে হাসিমুখে গ্রহণ করেন তিনি। কোরআনসহ দ্বীনের শিক্ষা দেন।
তিনি বলেন, ওদের সময় দিতে ভালো লাগে আমার। আমি মানুষকে ইসলামী শিক্ষা দিতে চাই। বিনিময়ে কোন কিছু চাই না। যতদিন বাঁচবো, ততদিন মানুষকে কোরআন ও দ্বীনের শিক্ষা দিয়ে যাবো।
তিনি আরও বলেন, যদি কেউ আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করে বা পরামর্শ চায় যে বিষয়টা হয়তো আমি জানিনা। তখন আমি স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছ থেকে বিষয়টি জেনে তাদেরকে বলি। অনেকেই আছেন যারা আমার চেয়ে বেশি জানেন, কিন্তু কাউকে শিক্ষা দেন না। আমি চাই তারা যার যার জায়গা থেকে মানুষকে ইসলামের শিক্ষা দিতে এগিয়ে আসুক।
মঞ্জুয়ারা বেগমের স্বামী আব্দুল মজিদ স্ত্রীর এমন উদ্যোগে ভীষণ খুশি। তিনি বলেন, তার স্ত্রী সংসারের বিভিন্ন কাজ বাকি রেখেও মানুষকে শিক্ষা দেন। তিনি এ বিষয়ে স্ত্রীকে উৎসাহ দেন এবং সহযোগিতা করেন। তিনি জানান, রোদ ও বৃষ্টির জন্য কোরআন শিখতে আসা শিক্ষার্থীদের উঠানে বসতে সমস্যা হয়। তাদের সুবিধার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা প্রয়োজন। এজন্য তিনি সরকারি অনুদান প্রাপ্তির আবেদন জানান।
স্থানীয় আলমদী জামে মসজিদের ইমাম মো. হাবিবুল্লাহ্ জানান, মাঝে মাঝেই মঞ্জুয়ারা বেগম বিভিন্ন বিষয়ে জানতে আমার কাছে আসেন। তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটা খুবই ভালো উদ্যোগ।
স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য শেখ বারেক বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং সরকারিভাবে তাকে একটি ঘর নির্মাণের জন্য অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করবো।