বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ি মসজিদ

এইচএম মোকাদ্দেস, সিরাজগঞ্জ
  ১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:২১

সিরাজগঞ্জ শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে সিরাজগঞ্জ-কামারখন্দ আঞ্চলিক সড়কের পাশে সদর উপজেলার কালিয়াহরিপুর ইউনিয়নের কালিয়াহরিপুর জমিদার বাড়ির পুকুর পাড়ে তৈরি করা হয়েছে গ্রামীণ মনোরম পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ি মসজিদ।

কাগজে-কলমে নাম ‘মসজিদ-এ-নওয়াজিস’ হলেও জমিদার বাড়ি মসজিদ নামেই এলাকায় বেশি পরিচিত। এ মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে অনেক লোকজন আসেন। সেই সঙ্গে স্থানীয়দের পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকেও নামাজ পড়তে মসজিদটিতে অনেকে আসেন।

মসজিদটির অবস্থান বাইরে থেকে তেমন কিছু বোঝা না গেলেও মসজিদটির সীমানা প্রাচীরের ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে স্বচ্ছ পানির গভীর মাঝারি আকারের একটি পুকুর। পুকুরের পশ্চিম পাড়েই স্থাপিত হয়েছে ‘মসজিদ-এ-নওয়াজিস’ নামের দ্বিতল এ মসজিদটি। আকারে খুব একটা বড় না হলেও মসজিদটির অপরূপ নির্মাণশৈলীতে মুগ্ধ হবে যে কেউ। পুকুরের পানির মধ্য থেকে গেঁথে তোলা হয়েছে মসজিদটি। মসজিদের সামনের অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির সিঁড়িগুলো শেষ হয়েছে পুকুরের তলদেশে গিয়ে। সিঁড়ির ওপরে উঠলেই দেখা যায় মসজিদ প্রাঙ্গণটি সম্পূর্ণ টাইলসে করা। পুকুরের পূর্বপাড়ে অর্থাৎ মসজিদের সামনে ওপাড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি। ওই সিঁড়ির উপরিভাগে করা হয়েছে দর্শনীয় ফটক।

এছাড়া পুকুরের চারদিকের পাড় সবুজ ঘাসে সাজানো হয়েছে। মসজিদ ঘিরে সব স্থাপনা সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে মসজিদের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। যার পুরো দৃশ্য আরও মোহনীয় করে তোলে। সিরাজগঞ্জ জাতীয় জুটমিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক ওয়াজেদ আলী, হবিরর রহমান ও মুদি দোকানি ওমর ফারুকসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে কালিয়াহরিপুর গ্রামের শ্যাম শঙ্কর মৈত্র নামে এক জমিদার ছিলেন। পাকিস্তান আমলে ওই জমিদারের বংশধররা তাদের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি ডা. নওশের আলী তালুকদারের কাছে বিক্রি করে ভারতে পাড়ি জমান। এরপর থেকে ওই সম্পত্তি ডা. নওশের আলী তালুকদার ও তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশরা ভোগদখল করতে থাকেন। প্রায় ২৫ বছর আগে ডা. নওশের আলীর বড় ছেলে নওয়াজিস আলী জমিদার ওই পুকুর পাড়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তখন থেকেই ‘মসজিদ-এ-নওয়াজিস’ নামে নামকরণ করা হয় এটির। ডা. নওশের আলী তালুকদারের সন্তানদের কেউ কেউ আমেরিকায় ও কেউ ঢাকায় থাকেন। তারা এলাকার বাইরে থাকলেও ডা. নওশের আলী তালুকদার ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে এলাকার দুস্থ-অসহায় মানুষদের কল্যাণে কাজ করছেন। এরই অংশ হিসেবে প্রায় দেড় বছর আগে এ মসজিদটিকে সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন করা হয়।

মসজিদের কেয়ারটেকার আব্দুল হাকিম জানান, আমরা দুজন সার্বক্ষণিক মসজিদটির দেখভাল করি। প্রতিদিন দু’বেলা মসজিদ প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। মসজিদের পেশ ইমাম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ১৩ বছর ধরে এ মসজিদটিতে নামাজ পড়াচ্ছি। বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন হওয়ার কারণে দিন দিন এখানে মুসলি­র সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আড়াইশ’ মুসলি­ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এ মসজিদ জুমার নামাজের দিন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজেও উলে­খযোগ্য সংখ্যক মুসলি­ নামাজ আদায় করে থাকেন।

তিনি জানান, আমি ও মুয়াজ্জিনসহ এখানে তিনজন দায়িত্বে আছি। আমাদের বেতনসহ মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণের সম্পূর্ণ ব্যয় ডা. নওশের আলী তালুকদার ফাউন্ডেশন থেকেই বহন করা হয়। কখনোই কারো অনুদান নেওয়া হয় না। এছাড়া ডা. নওশের আলী তালুকদার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংকটে দুস্থ অসহায়দের সহায়তা করা হয়।

ডা. নওশের আলী তালুকদারের ছেলে জুলফিকার হায়দার জানান, কালিয়াহরিপুর এলাকায় প্রায় এক একর জমির ওপর পুকুর এবং ওই পুকুর পাড়েই মসজিদটি স্থাপন করা হয়েছে। কয়েক ধাপে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর সঠিক ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি।

তিনি বলেন, কালিয়াহরিপুর এলাকায় একটি বয়স্ক চিকিৎসালয় খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে বয়োবৃদ্ধ অসহায় মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে