শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

​কুরআন ও হাদিসের আলোকে আপনার সৌন্দর্য...

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৫৫

ইসলাম মহান আল্লাহ্তায়ালার পক্ষ থেকে এক মহান জীবনাদর্শ। এতে রয়েছে মানবজীবনের সব দিক-নির্দেশনা। এই নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে মানবজাতি যে তার কাঙ্খিত পথ খুঁজে পাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কেননা, ইসলাম এসেছে সর্বময় প্রজ্ঞার অধিকারী মহান আল্লাহ্তায়ালার পক্ষ থেকে। আর তার বাস্তব প্রয়োগ শিখিয়েছেন রাসূলুল্লাহ্ সা.। এই বিস্ময়কর মহানাদর্শের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা চিন্তাশীল মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১. অহঙ্কার না করা। অহঙ্কার ইসলামে মহাপাপ। অহঙ্কারী ব্যক্তির ঠিকানা হবে জাহান্নাম। মহানবী সা. বলেছেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (এ কথা শুনে) এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, মানুষতো পছন্দ করে যে, তার কাপড়-চোপড় সুন্দর হোক, তার জুতো সুন্দর হোক, (তাহলে সেটাও কি অহঙ্কারের মধ্যে গণ্য হবে?) রাসূল বললেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন। অহঙ্কার হচ্ছে, সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা। (মুসলিম)

২. মিথ্যা কথা বলতে নিষেধ করেছে ইসলাম। মহান আল্লাহ্তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা মূর্তিরূপ অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো এবং মিথ্যা কথা হতে দূরে থাকো।’ (সূরা হজ, আয়াত- ৩০)

রাসূল সা. বলেছেন, ‘নিশ্চয় সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের পথ নির্দেশ করে।’ (বুখারী, মুসলিম)

৩. ইসলাম পরস্পরকে ক্ষমা করতে উদ্বুদ্ধ করে। মহান আল্লাহ্ বলেছেন, ‘তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষত্রুটি মার্জনা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করে দিন? আর আল্লাহ্ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা নূর, আয়াত- ২২)

এক ব্যক্তি রাসূল সা.-এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল সা. আমরা দাসদাসীকে কতবার ক্ষমা করব? এ কথা শুনে তিনি নীরব থাকলেন। অতঃপর লোকটি আবার প্রশ্ন করলেন। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক দিন তাকে সত্তরবার ক্ষমা করো।’ (আবু দাউদ)

৪. ইসলাম গালাগালি করতে নিষেধ করেছে। রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি এবং তার সঙ্গে ঝগড়া করা কুফরি।’ (বুখারী, মুসলিম)

৫. ইসলাম প্রতিবেশীকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে। মহানবী সা. বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর কসম সে ব্যক্তি মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হল, কোন ব্যক্তি হে আল্লাহর রাসূল সা. তিনি বললেন, ‘যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।’ (বুখারী, মুসলিম)

৬. ইসলাম মানুষকে সমাজসেবী হতে উদ্বুদ্ধ করে। মহানবী সা. বলেছেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ সেই ব্যক্তি যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফরয আমলগুলোর পর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল হল মুসলিমের মনে আনন্দ ভরে দেওয়া।’

৭. নিরুপায় বা বাধ্য হলে ইসলামে হারাম জিনিস হালাল হয়ে যায়। আল্লাহ্তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ্ যা কিছু তোমাদের ওপর হারাম করেছেন তা হচ্ছে, মৃতদেহ, রক্ত, শূকরের মাংস এবং যে প্রাণীর ওপর আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও নাম নেওয়া হয়েছে। তবে যদি কেউ আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধাচরণ করার ইচ্ছা পোষণ না করে অথবা প্রয়োজনের সীমা না ছাড়িয়ে ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে এসব খেয়ে নেয়, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।’ ( সূরা নাহল, আয়াত- ১১৫)

৮. অত্যাচারকে ইসলামে নিষিদ্ধ করেছে। মহান আল্লাহ্তায়ালা অত্যাচারীকে পছন্দ করেন না। পরকালে তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন কঠিন শাস্তি। আল্লাহ্তায়ালা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎ কাজ করেছে, তিনি তাদের প্রতিদান পুরোপুরিভাবে দেবেন। বস্তুত, আল্লাহ্তায়ালা অত্যাচারীদের ভালোবাসেন না।’ (আলে ইমরান, আয়াত- ৫৭)

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ্তায়ালা বলেন, 'হে আমার বান্দাহরা আমি নিজের উপর যুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের মাঝেও তা হারাম করছি। সুতরাং, তোমরা একে অন্যের প্রতি যুলুম করো না।’ (মুসলিম)

৯. ইসলাম অঙ্গীকার পালনে আদেশ করে। আল্লাহ্তায়ালা বলেন, ‘তোমরা অঙ্গীকার পালন করো, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞেস করা হবে।’ (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত-৩৪)

অঙ্গীকার বা চুক্তি পালন না করা মুনাফিকের লক্ষণ। মুসলিমের মাঝে সে দোষ থাকতে পারে না। এমনকি শত্রুপক্ষের সঙ্গেও যে চুক্তি করা হয় তা পালনীয়।

১০. ইসলাম আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার রিযিক প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারী, মুসলিম)

বিশ্বনবী সা. আরও বলেন, ‘আত্মীয়তার বন্ধন (আল্লাহর) আরশে ঝুলানো আছে, সে (আত্মীয়তার বন্ধন) বলে, যে ব্যক্তি আমাকে (আত্মীয়তার বন্ধন) বজায় রাখবে, সে ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ্ সম্পর্ক বজায় রাখবেন এবং যে ব্যক্তি আমাকে (আত্মীয়তার বন্ধন) ছিন্ন করবে, সে ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ্ও সম্পর্ক ছিন্ন করবেন।’ (বুখারী) । সূত্র-পুর্বের কলম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে