কোরবানির মর্ম ও উদ্দেশ্য

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০২১, ১২:৩৯

যাযাদি ডেস্ক

পবিত্র ঈদুল আজহা একেবারে কাছে চলে এসেছে। দু'দিন পরেই পড়বে পশু ক্রয় বিক্রয়ের হিড়িক। রংবেরঙের পশুতে মেতে উঠবে দিগ্বিদিক। মাঠে মাঠে কানাকানি হবে ক্রেতা বিক্রেতার। কারণ ঈদুল আযহার প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে- আল্লাহর জন্য পশু কোরবানি করা। কোরবানির মাধ্যমে নৈকট্য অর্জন করা। কিন্ত অনেকেই হয়তো পশু কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত নই। জানা নেই যে এই কোরবানি আমাদের থেকে কী নিতে চায়, আর কী দিতে চায়?

 

'কোরবানি' শব্দটির উৎপত্তি আরবি থেকে। বাংলায় এর অনুবাদ 'উৎসর্গ করা'। আরবিতে শব্দটির অর্থ যতটুকু ফুটে ওঠে, সে তুলনায় এর পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুবাদ অন্য ভাষায় ততটা হয় না। শরিয়তের পরিভাষায় এর অর্থ 'নৈকট্য অর্জন'। অর্থাৎ যে কাজটি করে আল্লাহর আরো নিকটবর্তী হওয়া যায়, তাকেই বলা হয় 'কোরবানি।

 

জানা থাকা উচিৎ- নিকটবর্তী হওয়ার মর্ম কী? আর কেনই বা নিকটবর্তী হতে হবে??

এর পটভূমি অন্য জায়গায়। যার সঙ্গে মানবসৃষ্টির উদ্দেশ্য প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। আল্লাহ তাআ'লা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। আর তা হলো আমরা যেন তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য করি, তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলি, জীবনকে তাঁর রঙে রঙিন করি। এসব ক্ষেত্রে আল্লাহ মানুষের ত্যাগ চান, অন্তর দেখেন, নিয়ত পরীক্ষা করেন। সফল হলে তবে তাকে দান করেন অপার্থিব শান্তির ঠিকানা– 'জান্নাত'।

 

কোরবানি আমাদের জন্য বার্তা নিয়ে আসে-প্রেম-প্রীতি, মোহাব্বাত-ভালোবাসা, এবং ত্যাগ-তিতিক্ষা একমাত্র মহান আল্লাহ'র তরে সপে দেয়ার। সর্বোপরি নিষ্ঠার সাথে একমাত্র তার জন্যই পশু জবাই করার।

 

তাই পশু কোরবানির ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআ'লা মানুষের তাকওয়ার পরিমাণই দেখবেন। পবিত্র কুরআনের ভাষায়— 'কোরবানির পশুর রক্ত, গোশত আল্লাহ'র কাছে পৌঁছায় না বরং তাঁর কাছে পৌঁছে শুধুমাত্র ধার্মিকতা এবং খোদাভীতি [সূরা হজ্জ:৩৮]।'

 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন-

﴿قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّه رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾

বলো— আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ মহান প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাঁর কোনো শরিক নেই। আর আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম। [সুরা আনআম : ১৬২-১৬৩]

 

আল্লাহর নবী হযরত ইব্রাহিম আ.-এর ত্যাগের বিনিময়ে আজ তাঁর কোরবানি সারা বিশ্বে প্রদীপ্ত হয়ে আছে। তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে আমরাও তাঁর থেকে দীক্ষা নিতে পারলে পরকালে প্রভুর কাছে উদ্দীপ্ত হয়ে থাকতে পারবো। সেজন্যে আমাদেরকে ত্যাগের মানসিকতা লালন করতে হবে। সদা সর্বদা আল্লাহর ডাকে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেয়ার পূর্ণ ইচ্ছা রাখতে হবে।

 

তাই মনে রাখা উচিৎ- এই কোরবানি যেন শুধু গোশত খাওয়ার সীমাবদ্ধ না থাকে। সতেজপূর্ণ পশুটির ক্রয় যেন লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে না হয়। আমাদের কোরবানি যেন দেয় ত্যাগের বার্তা, তিতিক্ষার আহ্বান, সহনশীলতার প্রেরণা।

 

আমাদের কুরবানি হোক আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। সেজন্যে কুরবানির গোশতে আর্তমানবতার জন্যও একটি অংশ নির্ধারণ করে রেখে তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন একান্ত কর্তব্য।

 

যাযাদি/এসএইচ