স্লোভেনিয়ার একমাত্র মসজিদ

প্রকাশ | ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৪৭

যাযাদি ডেস্ক

 

 

 

 

মধ্য ইউরোপের পাহাড় ও বনসমৃদ্ধ দেশ স্লোভেনিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক নাম ‘দ্য রিপাবলিক অব স্লোভেনিয়া।’ মোট আয়তন ২০ হাজার সাত শ একাত্তর বর্গ কিলোমিটার। লুবলিয়ানা দেশটির রাজধানী ও সর্ববৃহৎ শহর। আল জাজিরার তথ্যমতে, বর্তমানে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ৮০ হাজারেরও বেশি। স্লোভেনিজ মুসলিমদের বেশির ভাগ বসনিক ও আলবেনিয়ান। ২৫ জুন ১৯৯১ সালে সাবেক যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি।

 

খ্রিস্টীয় ১৫ থেকে ১৭ শতকের মধ্যে স্লোভেনিয়ার বিভিন্ন উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীন হয়। এ সময় স্লোভেনিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে খণ্ডকালীন মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে স্লোভেনিয়ায় কখনো মুসলিম শাসন কখনো স্থিতিশীল হয়নি। তাই সেখানে মুসলিম নিদর্শনগুলোর মধ্যে সামরিক স্থাপত্যের আধিক্য দেখা যায়। বলকান অঞ্চলে তুর্কি শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে; বিশেষত কসোভো, বসনিয়া, আলবেনিয়া, সাইপ্রাস ও তুরস্ক থেকে মুসলিমরা স্লোভেনিয়ায় বসতি স্থাপন করে। ইউরোপে উসমানীয় সাম্রাজ্যের অগ্রযাত্রা থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্লোভেনিয়ায় ইসলাম ধর্মের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

 

 ১৯১৫ সালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য বসনিয়ান মুসলিমদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে। এসব মুসলিম সেনারা স্লোভেনিয়ার ‘লগ পট ম্যানগার্টম’ শহরে মসজিদ নির্মাণ করে। এটাই ছিল স্লোভেনিয়ার একমাত্র রাষ্ট্র স্বীকৃত মসজিদ। ১৯২০ সালে মুসলিম সেনারা বসনিয়ায় ফিরে গেলে মসজিদটি পরিত্যক্ত হয়। ১৯৫০ সালের পর প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলোতে বহুসংখ্যক মুসলিম স্লোভেনিয়ায় ভাগ্যান্বেষণে এলে দেশটিতে মুসলিমদের ধর্মীয় তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৬০ সালে দেশটিতে ‘দ্য ইসলামিক কমিউনিটি’ (আইসি) প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

যদিও যুগোস্লাভিয়ার কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে মুসলিমরা খুব সামান্যই ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করত। কমিউনিস্ট শাসনের অবসান হলেও স্লোভেনিয়ার মুসলিমদের নানা ধরনের বিধি-নিষেধের ভেতর দিয়ে যেতে হয়।

 

স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৯১ সালের সংবিধান জনগণের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি দেয়। ২০০৭ সালে স্লোভেনিয়ার পঞ্চম ধর্ম হিসেবে ইসলাম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি লাভ করে। রাজধানী লুবলিয়ানায় একটি মসজিদ নির্মাণের আবেদন করার ৪৪ বছর পর ২০১৩ সালে স্লোভেনিয়ান সরকার তার অনুমোদন দেয়। ২০১৬ সালে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে তা ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ শুরু হয়।

 

মসজিদ নির্মাণে ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়, যার ৭০ শতাংশ কাতার সরকার প্রদান করেছে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আলেনকা ব্রুতেসেক বলেন, ‘ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে এই ভবন হবে একটি প্রতীকী জয় এবং ইসলাম ছাড়া ইউরোপ কখনো সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে না।’

 

সাবেক যুগোস্লাভিয়া ভেঙে গঠিত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে স্লোভেনিয়াই সর্বশেষ মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেয়। ‘দ্য ইসলামিক সেন্টার অব লুবলিয়ানা’ নামে পরিচিত এ মসজিদে ১৪০০ মানুষ একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদের পাশাপাশি এখানে গড়ে তোলা হয়েছে কমিউনিটি অফিস, শিক্ষাকেন্দ্র, পাঠাগার, রেস্টুরেন্ট ও ইমাম-মোয়াজ্জিনদের জন্য আবাসনকেন্দ্র। উদ্বোধনী দিনে জুমার নামাজে ইমামতি করেন দেশটির একজন খ্যাতনামা আলেম ও মুফতি নিদজাদ গ্রাবোস।

 

যদিও বিভিন্ন মহলের বিরোধিতা ও প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে মসজিদটি উদ্বোধনে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়। তবে দেশটিতে বসবাসরত মুসলিমরা কোনো প্রতিবন্ধকতা ও বিরোধিতায় পিছু হটেনি। দেরিতে হলেও তাদের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। নামাজ আদায় ও ইবাদত-বন্দেগির জন্য পেয়েছে সুনির্দিষ্ট স্থান ও দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।

 

অথচ স্লোভেনিয়ায় মসজিদ না থাকার কথা বলে ২০১৫ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল দেশটি। সে সময় স্লোভেনিয়া জানায়, ‘দেশটিতে মুসলিমদের জন্য কোনো মসজিদ নেই। পিউ রিসার্চের তথ্যানুসারে স্লোভেনিয়ায় মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান।

 

যাযাদি/এসআই