শবে কদরে চারটি আমল অবশ্যই করবেন

প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২২, ১৮:১৩

অনলাইন ডেস্ক

 

 

সবচেয়ে মর্যাদার রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর বাশবে কদর মহান আল্লাহ মহিমান্বিত রাতে কোরআনুল কারিম নাজিল করেন আবার লাইলাতুল কদরের সম্মানেসুরাতুল কদরনামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরাও আছে কোরআনে সুরায় বলা হয়েছে

 

লাইলাতুল কদরে কোরআন নাজিল হয়েছে, এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এবং রাতে ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন রাতের ফজর পর্যন্ত প্রশান্তি বর্ষিত হয়’ (দেখুন সুরা কদর: -)

 

হাজার মাসের চেয়ে উত্তম অর্থ শুধু যে একহাজার মাসের চেয়ে উত্তম-বিষয়টি এমন নয়, বরং অনেক বেশি বোঝাতেও হাজার শব্দটা ব্যবহার করা হয় তারপরও আমরা যদি এখানে শুধু এক হাজার মাসই ধরি, এর সময় দাঁড়ায় ৮৩ বছর মাস তার মানে ৮৩ বছর মাস পর্যন্ত ইবাদত করার যে ফজিলত বা সওয়াব পাওয়া যায়, তা এই এক রাতের ইবাদতেই মহান আল্লাহ দিয়ে থাকেন

 

হাদিসে রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি বিজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করতে বলা হলেও শবে কদরের সম্ভাব্য হিসাবে রমজানের ২৭তম রাতকে অগ্রগণ্য ধরা হয় হাদিসের গবেষকরা বলেন, রমজান মাসে নির্দিষ্ট কোনো রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সুস্পষ্ট দলিলের প্রয়োজন

 

তবে অন্যান্য রাতের চেয়ে শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর কোনো একটিতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি আর এর মধ্যে ২৭তম রাতে হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বিভিন্ন হাদিস থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় (ফতোয়াউল লাজনাহ আদ্-দায়িমা; সৌদি আরবের ফতোয়াবিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র: ১০/৪১৩) সেই হিসেবে বাংলাদেশে আজ (২৮ এপ্রিল) পবিত্র লাইলাতুল কদর (সূত্র: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

সুতরাং আজ সন্ধ্যা নামার পর থেকেই ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন হয়ে পড়া উত্তম এই রাতে ২০ রাকাত তারাবির পর দুই রাকাত করে যত সুন্দর করে, ইখলাসের সঙ্গে, খুশু-খুজুসহকারে নফল নামাজ পড়া যায় ততই ভালো এই রাতে কোরআন তেলাওয়াত করার ফায়দা অত্যধিক বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফার পড়বেন তওবা করবেন মাঝ রাত হতে শেষ রাত পর্যন্ত তাহাজ্জুদ পড়বেন কারণ, তাহাজ্জুদ মহান আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের বড় মাধ্যম তাই ইসলামে এই নামাজের গুরুত্ব মর্যাদা অনেক বেশি

 

এই রাতে প্রত্যেকটি আমল এমনভাবে করবেন, যেন আজকেই নিশ্চিত শবে কদর বিষয়ে মনে এমন কোনো সন্দেহ না রেখেই ইবাদত করবেন মনে রাখবেন, /১০ টাকা দান করলে হাজার মাস বা ৮৩ বছর মাস প্রতিদিন দান করার সওয়াব দুই রাকাত বেশি নামাজ পড়া মানে টানা ৮৩ বছর মাস বেশি নামাজ পড়ার সওয়াব, এই রাতে বেহুদা কথা না বলার অর্থ টানা ৮৩ বছর মাস বেহুদা কথা থেকে জবানকে হেফাজত করার সওয়াব, জিকিরে মশগুল থাকা মানে লাগাতার ৮৩ বছর মাস জিকিরে মশগুল থাকার সওয়াব এভাবে প্রত্যেকটি নেক আমলের বিপুল সওয়াব অর্জন করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে এই পবিত্র রাতে আর চারটি এমন আমল রয়েছে, যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এই মহান রাতে মিস করা কোনোভাবেই উচিত হবে না আমলগুলো হলো

 

) মাগরিব এশার নামাজ জামাতে আদায় করা

এই রাতে মাগরিব এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা উচিত তাহলে হাদিস অনুযায়ী শবে কদরের ফজিলত লাভ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে’ (মুসলিম: ৬৫৬)

 

) শবে কদরের দোয়া পড়া

আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, ‘তুমি বলো, ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নী’ (আরবি উচ্চারণ দেখে পড়বেন) অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ক্ষমা করাটা আপনার পছন্দ অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫১৩)

সুতরাং সারাদিন-রাত বেশি বেশি এই দোয়া করবেন এই দোয়াটি হাঁটা-চলা-শোয়া অবস্থায় করা যায় শেষ দশকে বেশি বেশি পড়া উচিত

 

) পরিচ্ছন্ন হওয়ার বিশেষ গুরুত্ব

 

লাইলাতুল কদরের বরকত লাভের প্রধান শর্ত হলো ভেতর বাইরের পবিত্রতা লাভ এবং একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়া আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি বলেন

 

উত্তম হলো- যে রাতে কদর অনুসন্ধান করা হবে, তাতে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, গোসল-সুগন্ধি-উত্তম কাপড়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা আর বাহ্যিক সৌন্দর্য সৌন্দর্যের জন্য যথেষ্ট নয়, যদি না মানুষের ভেতরটা সুন্দর হয় মানুষের ভেতর সুন্দর হয় তওবা আল্লাহমুখী হওয়ার মাধ্যমে’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ১৮৯)

) তাহাজ্জুদ পড়া

তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ফজিলত সবসময় বেশি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য তাহাজ্জুদের বিকল্প নেই শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে মগ্ন, তখন  প্রভুর ভয় ভালোবাসায় যারা নিদ্রা ত্যাগ করেন, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় আশঙ্কায় আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে’ (সুরা সাজদা: ১৬) মহানবী (.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ’ (মুসলিম: ১১৬৩)

 

 

উল্লেখ্য, লাইলাতুল কদরের বিশেষ কোনো নামাজ কিংবা পদ্ধতি নেই কদরের নামাজে বিশেষ সুরা পড়তে হবে-এমন কথা লোকমুখে প্রচলিত আছে, তবে এর কোনো ভিত্তি নেই নামাজের আলাদা কোনো দোয়া বা মোনাজাত নেই অনেকে তিন বার করে সুরা পড়েন এসব বিশুদ্ধ পদ্ধতি নয়, জরুরি বা বাধ্যতামূলকও নয় নিজের মতো করে দোয়া করবেন, নামাজে সুরা কেরাত পড়বেন অন্য সময়ের নফল নামাজের মতো

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লাইলাতুল কদর নসিব করে সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করুন আমিন

 

যাযাদি/এস