বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাগের কুফল ও পরিত্রাণের উপায়

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ আগস্ট ২০২২, ২০:৫০

মানব জীবনে রাগ ভয়ঙ্কর একটি ব্যাধি রাগের বিধ্বংসী ক্ষমতা অত্যন্ত ব্যাপক রাগ মানুষকে শারীরিক, মানসিক সামাজিকভাবে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন করে রাগী মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না তাই সে যেকোনো অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে রাগের কারণে ব্যক্তি শারীরিকভাবে স্ট্রোকের সম্মুখীন হতে পারে কারণ রাগের কারণে তার রক্তের চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়ে ফলে স্ট্রোকসহ অন্য যেকোনো মারাত্মক অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে রাগ পারিবারিকভাবে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটায় পিতা-পুত্রের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে, সন্তান পিতার সাথে বেয়াদবি করে, পিতা সন্তানকে পারিবারিকভাবে বয়কট করে সামাজিকভাবে প্রতিবেশী প্রতিবেশীর মধ্যে ঝগড়া হয়, পরস্পর আহত বা নিহত হয় আন্তর্র্জাতিকভাবে জনপদের জনপদ রাগের আগুনে ঝলসে যায় অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ দুরবস্থার শিকার হয় রাগ মানুষকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলে যতক্ষণ প্রতিশোধ নিতে পারে না ততক্ষণ সে শান্তিতে কোনো কাজ করতে পারে না এমনকি রাতে সে ঘুমাতে পারে না পরিপুষ্টিতে বাধার সৃষ্টি করে এভাবে রাগের বিধ্বংসী ক্ষমতা অত্যন্ত ব্যাপক এবং বহুমুখী সমস্যার সৃষ্টি করে

রাগ একটি নীরব ঘাতক গবেষণা থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত রাগ শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে অতিরিক্ত রেগে গেলে শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় উচ্চ রক্তচাপম বুকে ব্যথা, তীব্র মাথাব্যথা, মাইগ্রেন অ্যাসিডিটির মতো অনেক শারীরিক রোগ দেখা দিতে পারে দেখা দিতে পারে ডিপ্রেশন বা বিষণœতা বাড়তে পারে স্ট্রেস ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় অতিরিক্ত রাগ মানুষের আয়ুকাল কমিয়ে দেয় কারণ গবেষণায় দেখা গেছে সুখী মানুষ দীর্ঘদিন বাঁচে

রাগ থেকে সৃষ্টি হয় অনীহা, অনীহা থেকে সৃষ্টি হয় ঘৃণা ঘৃণার কারণে মানুষ হিংস্র্র আচরণ করে রাগের কারণে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন আক্রমণাত্মক আচরণ প্রকাশ পায় পারিবারিক কলহ, বন্ধুবান্ধব প্রতিবেশীদের সাথে বিবাদ, সহকর্মীদের সাথে মারমুখো আচরণ সবের অন্তর্ভুক্ত গবেষকরা বলেছেন, মানসিকভাবে পৃথিবীর ৮৫ শতাংশ মানুষ অন্যায়কারীর ওপর প্রতিশোধপরায়ণ হয় কেউ প্রতিশোধ নিতে পারে, আবার কেউ নিজের ব্যর্থতা অক্ষমতার কারণে ক্ষমা করে চরম প্রতিশোধপরায়ণ হলে শত্রুকে ভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চিন্তা তার মাথায় সারাক্ষণ ঘোরপাক খায়

মানব প্রকৃতির ভেতর জন্ম থেকেই রাগ-ক্রোধ বিদ্যমান একে সমূলে উৎপাটন করা যায় না হাত যেমন মানবের রক্ষার অস্ত্র তদ্রƒ ক্রোধও একটি অস্ত্র আর সেটি যথাস্থানে প্রয়োগ করলে পুণ্য, অসদ্ব্যবহারে পাপ এর অন্যায় প্রয়োগ একটি ঘৃণ্য অপরাধ অত্যধিক রাগ মানুষকে উদ্ধত, বদমেজাজি অহঙ্কারী করে তোলে অত্যধিক রাগ রাগহীনতার মাঝামাঝি পন্থার নাম বিনয় নম্রতা চরিত্রের ভূষণ এবং সর্বোত্তম পন্থা আল্লøাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা বড় বড় পাপ এবং অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বেঁচে চলে এবং রাগান্বিত হয়ে ক্ষমা করে’ (সূরা আশ শূরা-৩৭) আল্লাহ বলেন, ‘যারা সচ্ছল অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান-১৩৪)

রাগ মানুষকে আরো ছোট করে তোলে ক্ষমা আরো মহৎ আরো বড় করে তুলে রাগ যখন কারো মধ্যে প্রবেশ হয় তখন তার মানবীয় গুণাবলি তার থেকে সাময়িক প্রস্থান করে রাগ মানুষের ঈমানকে বিনষ্ট করে দেয় যেমনিভাবে তিক্ত ফল মধুকে নষ্ট করে দেয় রাগ কোনো সমস্যা সমাধান করে না

বরং সমাধানের পথকে জটিল করে তুলে রাগ মূর্খতার প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি মানুষের বুদ্ধির বিভ্রাট ঘটায় এটি দৃষ্টিশক্তি, বোধশক্তি, শ্রবণশক্তিকে হরণ করে রাগের পরিণতি শুধুই লজ্জা আর আপসোস আপনি যদি শক্তিশালী এই রাগকে সত্যি সত্যি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তাহলে সারা পৃথিবী আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘তোমার রাগের জন্য তোমাকে শাস্তি দেয়া হবে না, তোমার রাগই তোমাকে শাস্তি দেবে

রাগ থেকে পরিত্রাণের উপায়

প্রথম উপায় : রাগ থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রথম প্রধান উপায় হলো- মহান আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা অর্থাৎ তাউজুু তথাআউজুু বিল্লাহি মিনাশ শায়তোয়ানির রাজিমপাঠ করা সুলাইমান ইবনে সুরদ রা: থেকে বর্ণিত- একবার নবী সা:-এর সম্মুখেই দুই ব্যক্তি গালাগালি করছিল আমরাও তাঁর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম, তাদের একজন অপরজনের প্রতি এতটাই রেগে গিয়ে গালি দিচ্ছিল যে, তার চেহেরা রক্তিম হয়ে গিয়েছিল তখন নবী সা: বললেন, ‘আমি এমন একটি কালিমা জানি, যদি লোকটি তা পড়ত, তবে তার রাগ দূর হয়ে যেত অর্থাৎ যদি লোকটিআউজুু বিল্লাহি মিনাশ শায়তোয়ানির রাজিমপড়ত তখন লোকেরা সে ব্যক্তিকে বলল, নবী সা: কী বলেছেন, তা কি তুমি শুনছ না? সে বলল- নিশ্চয়ই পাগল নই’ (বুখারি-৬১১৫)

দ্বিতীয় উপায় : রাগ থেকে পরিত্রাণের দ্বিতীয় উপায় হলো- নিজের অবস্থার পরিবর্তন করা অর্থাৎ দাঁড়ানো অবস্থায় রাগ হলে বসে পড়তে হবে আর বসা অবস্থায় রাগ হলে শুয়ে পড়তে হবে হজরত আবু জার গিফারি রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লøাহ সা: বলেছেন, যখন তোমাদের কারো রাগ হয়, দাঁড়ানো থাকলে সে যেন বসে পড়ে যদি রাগের উপশম হয় তবে উত্তম তা না হলে সে যেন শুয়ে পড়ে’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি আবু দাউদ-৪৭৮৪)

তৃতীয় উপায় : রাগ শয়তানের কাজ শয়তান আগুনের সৃষ্টি আগুনকে নিভাতে হলে পানির দরকার সুতরাং রাগ হলে সে সময় পানি দিয়ে অজু করে নেবে হজরত আতিয়্যাহ বিন আরোয়াহ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লøাহ সা: বলেছেন, ‘ক্রোধ শয়তান থেকে উৎপন্ন এবং শয়তান আগুন দিয়ে তৈরি আগুন পানির সাহায্যে নির্বাপিত করা যায় যখন তোমাদের কারো রাগ উপস্থিত হয়, সে যেন তখন অজুু করে’ (আবু দাউদ-৪৭৮৬)

চতুর্থ উপায় : রাগ সংবরণে শক্তিমত্তার পরিচয় দেয়া রাগের বশবর্তী হয়ে কারো ক্ষতি করে ফেলা বীরত্ব নয়, বরং বীরত্ব হলো, কঠিন রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লøাহ সা: বলেছেন, ‘প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয় বরং সেই আসল বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে’ (বুখারি-৬১১৪)

পঞ্চম উপায় : চুপ থাকা অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা না করে চুপ হয়ে যাওয়া আব্দুল্লøাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো কঠিন করো না যখন তুমি রাগান্বিত হও চুপ থাকো; তুমি রাগান্বিত হও চুপ থাকো; তুমি রাগান্বিত হও চুপ থাকো’(মুসনাদে আহমাদ) আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- এক ব্যক্তি নবী সা:-এর কাছে বলল, আপনি আমাকে অসিয়ত করুন তিনি বললেন, তুমি রাগ করো না লোকটি কয়েকবার তা বললেন, নবী সা: প্রত্যেক বারই বললেনতুমি রাগ করো না’ (বুখারি-৬১১৬)

আসুন, আমাদের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করি রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সা:-এর উল্লিখিত উপায়গুলো আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করি ইনশাআল্লাহ আশা করা যায়, মারাত্মক ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাবো এবং আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো সহসাই বাস্তবায়ন করতে পারব আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সা: এই রাগ থেকে বা ক্রোধ থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে