আর্থিক সঙ্কট উত্তরণের আমল

প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:১৯

যাযাদি ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

রিজিক আল্লাহ তায়ালার এক মহা নিয়ামত। প্রতিটি মানুষ চায় তার জীবন-জীবিকায় প্রাচুর্যতা আসুক, আর্থিক সঙ্কট কেটে যাক। কিন্তু এ ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার। তিনি যাকে রিজিকে প্রশস্ততা দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা রিজিক সঙ্কুচিত করে দেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘বলুন! নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিজিকদাতা’ (সূরা সাবা-৩৯)। তাই রিজিক বৃদ্ধি ও আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য সবাইকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে এবং হালাল পন্থায় রিজিক অন্বেষণের চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি কুরআন-সুন্নাহয় বিশেষ কিছু আমলের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো রিজিক বৃদ্ধি ও আর্থিক সঙ্কট উত্তরণে খুবই উপকারী সেগুলোর ওপর আমল করার চেষ্টা করবে। নি¤েœ কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো-

তাওবা-ইস্তিগফার : পার্থিব জীবনের যত অকল্যাণ, বিপদাপদ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী এসব মানুষের হাতের কামাই। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে’ (সূরা রুম-৪১)। তাই অন্যান্য বালা-মুসিবতের মতো আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা এবং রিজিক বৃদ্ধির জন্যও বেশি বেশি ইস্তিগফার করতে হবে। কেননা, মুমিনের জীবনে তাওবা ও ইস্তিগফারের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার ও বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া রিজিক বৃদ্ধির কারণ। হজরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে আল্লাহ তার সব সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন’ (মুস্তাদরাকে হাকেম-৭৬৭৭)।

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা : অনেকে অর্থ খরচ হওয়ার ভয়ে আত্মীয়স্বজনের খোঁজ-খবর নিতে চায় না। অথচ আত্মীয়স্বজন একে অপরের খোঁজখবর নেয়া, বিপদাপদে নিজ সাধ্য ও সামর্থ্যরে আলোকে সাহায্য-সহযোগিতা করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। দুনিয়াতেই এর অনেক সুফল পাওয়া যায়। তন্মধ্যে একটি হলো- এর মাধ্যমে রিজিক ও আয়ু বৃদ্ধি পায়। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘যে লোক তার জীবিকা প্রশস্ত করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে’ (সহিহ বুখারি-৫৯৮৫)।

তাকওয়া অবলম্বন করা : অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করা এবং তাঁর অবাধ্যতা ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। কেননা, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে চলে তথা তাকওয়ার পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য প্রত্যেক সঙ্কট ও বিপদাপদ থেকে উত্তরণের সহজ উপায় বের করে দেন। অভাব-অনটন দূর করে তাকে ধারণাতীত রিজিক দান করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘যে কেউ-ই আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করবে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য সঙ্কট থেকে উত্তরণের কোনো পথ বের করে দেবেন এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিজিক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে’ (সূরা আততালাক-২)।

সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করা : এটি পবিত্র কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা। অভাব ও আর্থিক সঙ্কট উত্তরণে এই সূরা তিলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: অসুস্থ হলে খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ওসমান রা: তাকে দেখতে যান। তার সার্বিক খোঁজখবর নেয়ার পর ওসমান রা: বললেন, আমি কি আপনার জন্য বায়তুল মাল থেকে কোনো সম্পদ বরাদ্দ দেবো। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বললেন, আমার কোনো সম্পদের প্রয়োজন নেই। ওসমান রা: বলেন, এটি আপনার পর আপনার সন্তানদের উপকারে আসবে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বললেন, আপনি চিন্তা করছেন যে আমার মৃত্যুর পর আমার সন্তানরা দারিদ্র্য ও উপবাসে পতিত হবে। 

কিন্তু আমি এরূপ চিন্তা করি না, আমি আমার কন্যাদেরকে সূরা ওয়াকিয়া শিক্ষা দিয়েছি এবং জোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছি যে, তারা যেন প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করে। আমি রাসূল সা:-কে বলেতে শুনেছি- যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করবে সে কখনো অভাবগ্রস্ত হবে না, অনাহারে থাকবে না, রিজিকের অভাবে কষ্ট করবে না তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করতে পারবে না’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান-২৪৯৮)।

যাযাদি/ সোহেল