দুয়ার খুলেছে রহমতের, এসেছে রমজান

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০:১২ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০:১৩

যাযাদি ডেস্ক

হজরত মুহম্মদ (স) দয়াভরা আবেগ-উচ্ছ্বাস নিয়ে রোজাকে স্বাগত জানাতেন। উৎসাহিত করতেন উম্মতকেও। কারণ এ মাস আল্লাহর। আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস। এগারো মাস জাগতিক স্বপ্ন-স্বাদে ডুবে থাকা বেপথের মানুষটিও রোজায় খুঁজে পাবে আল্লাহর একান্ত রহমত। খুঁজে পাবে অতীতে পাপ মোচনের হীরকসন্ধান। হজরত জাবের (রা)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, রোজা আমার জন্য : স্বয়ং আমিই এর প্রতিদান দেব। মুসলিম শরিফ : ২৭৬০

আকাশে চাঁদ। রোজার বাঁকা চাঁদ। দুয়ার খুলেছে রহমতের। বয়ে চলছে রহমতের জোয়ার। শুরু হয়েছে রহমতের উৎসব। জান্নাতেও সাজসাজ রব। সেজেছে নতুনরূপে। রহমতের ফল্গুধারায় ডুবে আছে পৃথিবী। অধীর অপেক্ষায় বিশ্ব মুসলিম প্রভুর রহমত-করুণার ভাগ পেতে।

পবিত্র রোজার মাসকে স্বাগত জানানো হয় ভাব ও ভিন্ন ভাষায়। শুধু আহলান-সাহলান ইয়া শাহরু রমাজান কিংবা খোশ আমদেদ মাহে রমজান নয় বরং এ মাসে নিজের জীবন ধর্ম ও ইমানের রঙে রাঙিয়ে অধিক ইবাদতে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করে রোজাকে স্বাগত জানানোর প্রকৃত পথ।

বরেণ্য ফকিহ মুফতি তাকি উসমানি ইসলাহি খুতুবাত গ্রন্থে লিখেছেন- রমজানকে সঠিকভাবে বরণ করার পদ্ধতি হচ্ছে- ‘রমজান আগমনের আগেই একটি রুটিন বা প্ল্যান করা। যাতে বরকতময় মাসটি আল্লাহতায়ালার ইবাদতে ব্যয় করা যায়। রমজান আসার আগেই ধ্যানমগ্ন হওয়া- রমজান আসছে। চিন্তা করা কীভাবে বাইরের ব্যস্ততা কমানো যায়। ঘরে ও মসজিদে ইবাদতের ব্যস্ততা বাড়ানো যায়।

কেউ যদি এ মাসে নিজেকে সম্পূর্ণ ঝামেলামুক্ত করে নেয়, তা হলে আলহামদুলিল্লাহ। যদি তা সম্ভব না হয়, তা হলে দেখতে হবে- কোন কোন কাজ এ মাসে না করলেও চলবে সে কাজগুলো ছেড়ে দিন। যে ধরনের ব্যয় কমানো সম্ভব, কমিয়ে দেখুন। যেসব কাজ রমজানের পরে করলেও চলবে, সেগুলো পরে করুন। তবুও রমজানের অধিক সময় ইবাদতের মাধ্যমে কাটানোর ফিকির করুন। রমজানকে স্বাগত জানানোর সঠিক পদ্ধতি এটাকেই মনে করি। এভাবে করলে ইনশা আল্লাহ এ মাসের সঠিক মর্যাদা রক্ষা হবে। রোজার নূর ও বরকত অর্জিত হবে।

রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা সংযমী হও। সূরা বাকারা : ১৮৩

আল্লাহতায়ালা আরও বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোজার মাস পায় সে যেন রোজা রাখে। সূরা বাকারা : ১৮৫

রোজার ফজিলত সম্পর্কে নবী করিম (স) বলেছেন, হজরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজানের রাতে ইবাদত করে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। বুখারি শরিফ : ১৯১০

নবীজি (স) আরও বলেছেন রমজানের জন্য বেহেশত সাজানো হয় বছরের প্রথম থেকে পরবর্তী বছর পর্যন্ত। তিনি বলেন, যখন রমজান মাসের প্রথম দিন উপস্থিত হয়, বেহেশতের গাছের পাতা থেকে আরশের নিচে বড় বড় চোখবিশিষ্ট হুরদের প্রতি বিশেষ হাওয়া প্রবাহিত হয়। তখন তারা বলে, হে আল্লাহ! আপনার বান্দাদের মধ্য থেকে আমাদের জন্য এমন স্বামী নির্দিষ্ট করুন যাদের দেখে আমাদের চোখ জুড়াবে এবং আমাদের দেখেও তাদের চোখ জুড়াবে। ফাজায়েলে রমাজান লী-ইবনে শাহীন, পৃ. ১৫

হজরত আবু হুরায়রা সূত্রে রাসুল (স) বলেছেন, যখন রমজান মাস আসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। বোখারি শরিফ : ৩১০৩

অপর হাদিসে এসেছে, জান্নাতের মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতীত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। বুখারি শরিফ : ১৭৭৯

আমাদের জীবনে কত রোজা আসে-যায়, আল্লাহর রহমতের ছিটেফোঁটাও হয়তো ভাগ্যে জোটে না; শুধু রোজাকে স্বাগত জানানোর ভাষা জানি না বলে। আজকের এই দিনে আসুন দুনিয়ার নেশা ছেড়ে, ইবাদতের নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করি। ডুব দিই আল্লাহর প্রেমে।

যাযাদি/ এস