গেলেন মসজিদে নামাজ বন্ধ করতে, ফিরে এলেন ইসলাম গ্রহণ করে
প্রকাশ | ০২ মে ২০২৩, ১১:৫৬ | আপডেট: ০২ মে ২০২৩, ১৩:০৩
স্বাভাবিকভাবে কোনো উৎসব হলে একটু-আধটু হৈ চৈ হবেই। সে যে ধর্মেই হোক। আর যদি যে অনুষ্ঠানটি হয় কোনো বৃদ্ধাশ্রমের পাশে তাহলে তো সেখানের বাসিন্দাদের খারাপ লাগার কথা।
ঠিক তেমন একটি ঘটনা ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ায়। সম্প্রতি পালিত হয় মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব ইদুল ফিতর। আর সে দিন স্বাভাবিকভাবে মুসলিমরা এক সঙ্গে জড়ো হন।
অস্ট্রেলিয়ার একটি চলছিল ঈদের জামায়াতের আয়োজন। মসজিদভর্তি মুসল্লি। অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিমদের সংখ্যা কম হলেও উৎসবের দিনে সবাই একসাথে একই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আর তাতে মুসলিমদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
সবাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত। কেউ স্বজনদের সাথে কোলাকুলি করছেন আরবার কেউ কেউ গল্প করছেন। ঈদ উৎসবের এমন দৃশ্য স্বাভাবিকই বটে। নতুন জামায় সবাইকে লাগছে অন্যরকম। কিন্তু এবার ঈদের দিন অস্ট্রেলিয়ায় ঘটলো ভিন্ন এক ঘটনা।
ঈদের দিনে এমন শোরগোলে বিরুক্ত হয়ে অভিযোগ দিতে মসজিদেই হাজির হন ব্রেইন নামের এক অস্ট্রেলিয়ান। বয়সে বৃদ্ধ। তিনি খুব বিরক্ত হয়ে যখন মসজিদে প্রবেশ করবেন তখন প্রত্যক্ষ করলেন এক অন্যরকম দৃশ্য। কিছু সময় দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখলেন আর নিজের মনের কাছে প্রশ্ন রাখলেন এমন মিলনমেলা তো কত বছর ধরে তিনি দেখননি। তার বয়সের মানুষগুলোর প্রতি মমতা দেখে তিনি আবেগআপ্লুত হলেন। আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তিনি মসজিদের আনন্দমুখর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হলেন। প্রশান্তিতে ভরে ওঠে তার অন্তর। তিনি সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হন নামাজের দৃশ্য দেখে। একসঙ্গে এত মানুষ এক কাতারে কি করে শামিল হলেন। সে প্রশ্নেই তিনি ইসলাম গ্রহণে আকৃষ্ট হলেন বেশি।
তিনি এর কারণ জানতে চাইলেন, মসজিদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসলেন। তাদের আচরণে তিনি এতোটাই মুগ্ধ হলেন যে তার চোখে পানি চলে আসে। তার তিনি ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কথা বললেন, মিষ্টি করানো হলো তাকে। এর মধ্যে কয়েকজন তাকে বাবা বলেও সন্বোধন করলেন। এমন কাণ্ডে তিনি অসহায়ের মতো কেঁদে দিলেন। বললেন কতদিন পর এতো মানুষের সঙ্গে একত্রিত হতে পেরেছি। একা একা বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে থাকতে মনে হতো মনে গেলেই তো ভালো হতো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আরও কিছু দিন বাঁচা উচিত।
হঠাৎ করে তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে পড়ে নিলে কালেমা শাহাদাত। তার সঙ্গে সঙ্গে সবাই পড়লেন সেই মহান বাণি।
তার জীবনে শুরু হলো জীবনের নতুন পথচলা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে সেই বৃদ্ধকে আরবি ও ইংরেজিতে কালেমা পাঠ করতে দেখা যায় মসজিদের ইমামকে।
তখন মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও উপস্থিত মুসল্লিদের শুভেচ্ছা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। গত ২২ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের উপকূলীয় গোল্ড কোস্ট শহরে এই দৃশ্য দেখা যায়।
মুসলিম হওয়ার পর শুক্রবার তিনি জীবনের প্রথমবার জুমার নামাজ পড়েন। এ সময় তাকে বেশ উৎফুল্ল দেখা যায়।
অস্ট্রেলিয়ার প্রসিদ্ধ ইসলাম প্রচারক ও দাঈ শায়খ হাসান গোস ফেসবুকে সেই দৃশ্য শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ঈদের দিনে আমাদের প্রিয় ভাইকে ইসলামের পথে স্বাগতম। সকালে তিনি শোরগোলের অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। আর মুসলিম হয়ে ঘরে ফিরে গেলেন। সত্যিই আল্লাহ মহান।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৃদ্ধের ইসলাম গ্রহণের ভিডিও দেখে মুগ্ধতার কথা জানান অনেকে। জীবনের শেষ মুহূর্তে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়ায় তাকে অভিবাদন জানান মুসলিমরা। অনেকে তার কাছে ইসলামের সঠিক চিত্র উপস্থাপনের বিষয়টির প্রশংসা করেন। কারণ তা শোনার পরই বৃদ্ধের ক্রোধ মিশে যায় এবং অন্তর ইসলামের জন্য প্রস্তুত হয়। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার অনেক প্রবাসী মুসলিম শায়খ হাসানের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। ইসলাম প্রসারে তিনি মেধা ও অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে যাচ্ছেন। তাছাড়া ঈদের দিন তার কাছে ওই বৃদ্ধের সাথে এক নারীও ইসলাম গ্রহণ করেন। সূত্র : আল-জাজিরা।
যাযাদি/ এস