গাজায় ইফতার-সেহেরি, আনন্দ নয়, শোকের আবহ

প্রকাশ | ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৭ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৯

যাযাদি ডেস্ক
এক ফিলিস্তিনি পরিবার গাজার দেইর আল বালাহ-তে তাদের বিধ্বস্ত বাড়ির সামনে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছে - ফাইল ছবি

চারিদিকে লাশে গন্ধ, কবর দেয়ার জায়গা হচ্ছে না। প্রতিদিন নির্বিচারে গাজার মানুষকে হত্যা করছে ইসলাইলী বাহিনী। এর মধ্যে সোমবার মুসলমানদের পবিত্র মাস রমজানের প্রথম দিন রানদা বাকের ও তার পরিবারের সদস্যরা দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে দক্ষিণ গাজায় তাদের তাঁবুর ভেতর বসে ইফতার করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

বাকের দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও মানবিক ত্রাণ থেকে পাওয়া খাবারের সমন্বয়ে ইফতারের ব্যবস্থা করেছিলেন, যার মধ্যে ছিল ভাত, আলু ও শিমের বীজ। ইফতারের সময় তার তিন সন্তান খুব চুপচাপ ছিল।

বাকেরের ১২ বছর বয়সী ছেলে আমির এতটাই অসুস্থ যে সে তাদের সাথে যোগ দিতে পারেনি। যুদ্ধের আগে তার স্ট্রোক হয়। এই রমজানে বাকেরের স্বামী ইসরাইলী হামলায় নিহত হন। গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রথম মাসে তিনি এবং আরো ৩১ ব্যক্তি প্রাণ হারান। ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজা সিটির উচ্চ মধ্য-বিত্ত শ্রেণী অধ্যুষিত রিমাল জেলায় তাদের ও তাদের প্রতিবেশীদের বাড়িগুলো মাটির সাথে মিশে যায়।

বাকের (৩৩) বলছেন, 'এ বছরের রমজান মাস হলো খাদ্যাভাব, বেদনা ও ক্ষতির।' তিনি আরো বলেন, 'যাদের আমাদের সঙ্গে টেবিলে থাকার কথা, তারা আমাদের ছেড়ে গেছেন।'

শান্তিপূর্ণ সময়ে, বাকের তার বাড়ি সুন্দর করে সাজাতেন এবং ইফতারে অনেক খাবারের আয়োজন করতেন। কিন্তু গাজায় অন্য সবার মতো, তার জীবনও ইসরাইলের বোমা হামলা ও স্থল হামলার সর্বাত্মক অভিযানে ছারখার হয়ে গেছে। তার স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি, তার সন্তানরা ও মা তাদের বসবাসস্থল ছেড়ে পালিয়ে দক্ষিণ গাজার পল্লী অঞ্চল মুওয়াসিতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে আরো অসংখ্য ফিলিস্তিনি তাদের নিজ নিজ বাড়ি ছেড়ে এসে তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন।

ইসরাইল ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিরা খাবারের তীব্র অভাবে ভুগছে। অনেকে পশুখাদ্য খেয়ে বেঁচে আছে। প্রাপ্তবয়ষ্করা এক বেলা খেয়ে শিশুদের জন্য খাবার বাঁচানোর চেষ্টা করছে।

জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে গৃহহীন ফিলিস্তিনি রাদওয়ান আবদেল হাই বললেন, 'আমরা এমনিতেই রোজা রাখছি। প্রত্যেক পরিবারে একজন শহীদ বা আহত সদস্য রয়েছে।'

ফিলিস্তিনিরা রাফায় খোলা বাজারে পণ্য খুঁজে পাবার চেষ্টা করছেন। সরবরাহ খুব কম। গোশত, সবজি, ফল প্রায় নেই। দাম আকাশচুম্বী। অনেকেই ক্যানের খাবার খাচ্ছেন।

খান ইউনিসে একজন গৃহহীন নারী সাবাহ আল হেন্দি বললেন, 'কারো চোখে আনন্দ নেই। সব বাড়িতে শোক। এখানে রমজানের কোনো আবহ নেই।

যাযাদি/ এস