ফিতরা কখন দেয়া ওয়াজিব?
প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০১
মাহে রমজানুল মোবারকের আজ ত্রয়োদশ দিবস। সিয়াম সাধনার এ মাস যখন শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়, তখন আর্থিক ইবাদত অর্থাৎ ‘সদকাতুল ফিতর’-এর প্রসঙ্গ আসে। রমজান মাসের শেষভাগে এবং ঈদুল ফিতরের জামায়াতের আগে এই সদকাটি আদায় করতে হয়।
সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা মুসলিমদের ওপর আবশ্যক করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা আদেশ করেছেন তা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক আদেশ করার সমতুল্য। যা মহান রাব্বুল আলামিন নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুম মান্য করল, সে আল্লাহর হুকুমই মান্য করল। আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল, আমি আপনাকে তাদের জন্য পর্যবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।’ (সূরা নিসা ৮০)
পবিত্র কুরআনের অপর এক সূরায় বলা হয়েছে, ‘যে কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং মুমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ওইদিকে ফিরাব যে দিকে সে ফিরতে চায় এবং আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। তা নিকৃষ্টতম গন্তব্যস্থল।’ (সূরা নিসা : আয়াত ১১৫)
এ প্রসঙ্গে সূরা হাসরে আরও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের যা আদেশ করেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক।’
এ হিসেবে মহানবীর নির্দেশিত সাদকাতুল ফিতর আদায় মুসলিম নারী-পুরুষ, ছোট বড় সবার ওপর ওয়াজিব। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে সকল মুসলিমের ওপর এক সা’ খেজুর, বা এক সা’ যব সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি যখন তোমাদের কোনো বিষয়ে আদেশ করি, তোমরা তা সাধ্যানুযায়ী পালন কর।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন অশ্লীল ও অনর্থক কথাবার্তার কারণে সিয়ামে ঘটে যাওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো দূর করার জন্য ও মিসকিনদের খাদ্য প্রদানের জন্য। ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করলে তা সদাকাতুল ফিতর হিসেবে গণ্য হবে। আর ঈদের সালাতের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সাধারণ দানের মতো একটি দান হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ ও ইবন মাজাহ)
সদকাতুল ফিতরের হকদার কারা সে সম্পর্কেও হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে দরিদ্র, ঋণ আদায়ে অক্ষম এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে ফিতরার হকদার। এক সদকাতুল ফিতর অনেক ফকিরকে দেওয়া যাবে এবং অনেক সদকাতুল ফিতর এক মিসকিনকেও দেওয়া যাবে। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, কিন্তু হকদারকে কী পরিমাণ দিতে হবে তা নির্ধারণ করেননি। সুতরাং যদি অনেক ব্যক্তি তাদের সদকাতুল ফিতর ওজন করার পর একটি পাত্রে জমা করে এবং সেখান থেকে তা পুনরায় পরিমাপ ছাড়া বণ্টন করে, তবে তা বৈধ হবে।
হাদিসে এসেছে, রমজান মাসে রোজা রাখা যেমন অবশ্য পালনীয় তেমনি মাসের শেষে সদকাতুল ফিতর আদায় করা জরুরি। তবে বাধ্যতামূলক হওয়ার জন্য শর্ত আছে। ঈদের দিনে যার মালিকানায় তার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সমমূল্যের সম্পদ থাকবে, তার জন্য সদকাতুল ফিতর আদায় করা বাধ্যতামূলক বা ওয়াজিব। যাকাতের সাথে এখানে পার্থক্য প্রধানত দু’টি, যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সম্পদ বৃদ্ধিশীল হওয়া শর্ত। যেসব সম্পদ বৃদ্ধিশীল নয়, তা সঞ্চিত থাকলে মূল্য যত বেশিই হোক, যাকাত ফরজ হয় না। দ্বিতীয়ত, সদকাতুল ফিতরের জন্য সঞ্চিত সম্পদ পুরো এক বছর থাকা জরুরি নয়। কিন্তু যাকাতের ক্ষেত্রে পুরো এক চান্দ্র বছর এই অতিরিক্ত সম্পদ মালিকানাভুক্ত থাকা শর্ত। শুধু ঈদুল ফিতরের দিনে কারো কাছে এই পরিমাণ সম্পদ থাকলেই তার জন্য সদকাতুল ফিতর আদায় করা বাধ্যতামূলক। আর এমন আর্থিক সামর্থ্য ও সচ্ছলতা না থাকলে তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
যাযাদি/ এস