ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া...

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৩

যাযাদি রিপোর্ট
ছবি-সংগৃহিত

ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে ইফতারে রয়েছে যেমন অসামান্য ফজিলত, তেমনি ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া (আল্লাহর কাছে) ব্যর্থ হয় না। 

১. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। 

২. ন্যায় বিচারক বাদশাহর দোয়া। 

৩. মজলুমের দোয়া। (মুসনাদে আহমদ)

তাই রোজাদারের জন্য পুরো রমজান মাস জুড়ে বিভিন্ন আবদার পাশ করিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হলো ইফতারের সময়। ইফতারকারী ইফতার সামনে নিয়ে আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাইলে তিনি খালি হাতে ফেরত দেবেন না। 

এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) রোজাদার ইফতারকারীর জন্য সাওয়াব ও কল্যাণ স্থির হওয়ার বিষয়ে আগাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং রোজার শোকরিয়াস্বরূপ এভাবে দোয়া করতে বলেছেন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন, ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’ অর্থাৎ ইফতারের মাধ্যমে পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো (আবু দাউদ, মিশকাত)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ ওই মুহূর্তটিকে বেশি পছন্দ করেন, যখন বান্দা চরম বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ ও সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে, তাঁর কাছে মাগফিরাত ও নাজাত কামনা করে। এ হিসাবে মাহে রমজান দোয়া কবুলের সর্ব উৎকৃষ্ট সময়। আল্লাহ রোজাদারদের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন জীবন লাভ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তাই নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের নিদ্রা ইবাদততুল্য, চুপ থাকা তাসবিহ-তাহলিলতুল্য, আমল ইবাদত সওয়াব হাসিলে বেশি অগ্রগণ্য, দোয়া কবুলযোগ্য ও তার গুনাহ ক্ষমার যোগ্য।’ (বায়হাকি)
আল্লাহর কাছে দোয়া করলেই তা কবুল হয়। যা চাওয়া হয় তাই দেওয়া হয়। অথবা তা পরকালের জন্য জমা রাখা হয় অথবা দোয়ায় যা চাচ্ছেন তা আপনার জন্য কল্যাণকর নয়, তাই দেওয়া হয় না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন দুটি বাক্য আছে, যা উচ্চারণ করতে খুবই সহজ, কিন্তু কিয়ামতের দিন আমলনামা ওজনের পাল্লায় খুব ভারী এবং আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয়। তা হলো : সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম।’ (বুখারি ও মুসলিম) আয়াতুল কুরসি, ইসমে আজম, আল্লাহর ৯৯টি নামের অর্থসহ আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরিফসহ দোয়া করা। আল্লাহর প্রশংসা যেমন, আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন দোয়ার শুরুতে বলা। ওয়া ইলাহুকুম ইলাহু ওয়াহিদুন লা ইলাহা ইল্লা হুয়ার রাহমানুর রাহিম। (সূরা বাকারা ১৬৩) আলিফ লাম মিম। আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম। (সূরা আল ইমরান ১)

নবী করিম (সা.) রমজান মাসে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘এই মাসে তোমরা চারটি কাজ অধিক পরিমাণে করো, ১. বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর জিকির করা; ২. আল্লাহর কাছে মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা। ৩. জান্নাত চাওয়া, ৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া।’’

সাধারণত দোয়ার নিয়ম হলো একাকী দোয়া করা। অজু না থাকলেও দোয়া করা যায়। এমনকি হাত না তুলে মনে মনে কিংবা মুখে বান্দা নিজের সব কামনা-বাসনার কথা আল্লাহর কাছে বলতে পারে। তবে দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হালাল উপার্জন ও ভক্ষণের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা।

রাতের শেষ তৃতীয়াংশে অজু করে পবিত্র হয়ে দুই রাকাত সালাতুত তওবার নামাজ পড়ে ও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে সুবহানাল্লাহ (আল্লাহ পবিত্র), আলহামদুলিল্লাহ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য), আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ), ইয়া ওয়াহহাব (আল্লাহ সবকিছু দানকারী), আসতাগফিরুল্লাহ (আমি আমার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি), দোয়া ইউনুছ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালেমিন (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, আল্লাহ পবিত্র মহান, আমি তো সীমা লঙ্ঘনকারী), আল্লাহর মহান রাসূল (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে ইনশা আল্লাহ।

হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ মহান সবচেয়ে কাছের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকছ? আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে চাইছ? আমি তাকে তা দেব। কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব।’ (মুসলিম)

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে পাপমুক্তির জন্য দোয়া কীভাবে করতে হবে, তার বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন ইহকাল ও পরকালের সফলতার জন্য কীভাবে দোয়া করতে হবে, এই মর্মে আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের ইহকালে কল্যাণ দাও এবং পরকালেও কল্যাণ দাও এবং আমাদের অগ্নিযন্ত্রণা থেকে রক্ষা করো।’ অন্যত্র দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি; যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না করো এবং দয়া না করো, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’ (সূরা আরাফ ২৩) 

যাযাদি/এস