বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরগুনায় আলোচিত যুবলীগ কর্মী বাদশা হত্যা মামলা

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে সিআইডির অভিযোগপত্র
বরগুনা প্রতিনিধি
  ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৫২

বরগুনার আলোচিত যুবলীগ কর্মী বাদশা হত্যা মামলায় বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিদ্দিকুর রহমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ভায়রা ও সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপপরিদর্শক সেলিম সরদার গত ৭ জানুয়ারি আলোচিত এই হত্যা মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে শুনানির জন্য আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেছে।

এ মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলেন, মহসিন সরদার, জাকারিয়া, আল-আমিন গাজী, রাকিব সরদার, সাবু সরদার, সাবু ফকির, মতলেব সরদার, আল-আমিন আকন, মাহবুব সরদার, নাসরিন বেগম, সেয়ারা বেগম, আল আমিন গাজী ও মাহতাব সরদার। নিহত বাদশা বুড়িরচর ইউনিয়নের সোহরাব মৃধার ছেলে। তিনি জেলা যুবলীগের সদস্য ছিলেন।

পুলিশ জানায়, ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি রাত আটটার দিকে শামীম ইমতিয়াজ বাদশাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের কামড়াবাদ এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরের দিন ৯ জানুয়ারি নিহত বাদশার বাবা সোহরাব মৃধা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগ রয়েছে, মহসিন নামের এক যুবকের সঙ্গে বাদশার বাবা সোহরাব মৃধার কথাকাটাকাটি হয়। এ সময় সোহরাব মৃধাকে মারধর করেন মহসিন ও তার সহযোগীরা। বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করায় মহসিনের লোকজন মিলে বাদশাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় বাদশা দৌড়ে পাশের অটোরিকশা স্ট্যান্ডে যান এবং মুঠোফোনে তার বাবাকে সবকিছু জানান। এরপর তিনি মূর্ছা যান। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় বাদশাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাদশাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই হত্যা মামলা প্রথম তদন্ত করেন বরগুনা সদর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বদলি হওয়ার পর মামলাটির তদন্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)। সে সময়কার সিআইডির পরিদর্শক মো. শাহজাহান মিয়া ও জুলফিকার প্রায় এক বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে পারেননি। পরে তদন্ত দেওয়া হয় সিআইডির উপপরিদর্শক সেলিম সরদারকে। তিনি তদন্ত শেষ করে ৭ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রে সিআইডি পুলিশ উল্লেখ করে. গ্রেপ্তার হওয়া ১-৪ নম্বর আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির আলোকে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের মুঠোফোনে বুধবার বিকেলে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বরগুনার উপ-পরিদর্শক সেলিম সরদার বলেন, আসামিদের আদালতে জবানবন্দির আলোকে মামলায় বুড়িরচর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানসহ ১৪ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। চাঞ্চল্যকর এ মামলার তথ্য, উপাত্ত ও আলামতসহ পাঁচ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।

এদিকে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ায় নিহত বাদশার বাবা সোহরাব মৃধা সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমি সন্তান হত্যার সুবিচারের জন্য দ্বরে দ্বারে ঘুরেছি। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমি হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এখন কিছুটা আশার আলো দেখছি। আমি আমার সন্তান হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে