বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সখীপুরে করোনাকালে বিয়ে ১৪৩২টি বিচ্ছেদ ১০০৬টি

সখীপুর প্রতিনিধি
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:৪৮
আপডেট  : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:৫৭

করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও নতুন বিয়ে এবং একই সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ থেমে থাকেনি সখীপুরে। গত দুই বছর টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিয়ে হয়েছে ১৪৩২টি আর বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে ১০০৬টি।

সখীপুরের উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২০ সালে ৭৫৭টি বিবাহ ও ৪৭৬টি বিচ্ছেদ হয়েছে। ২০১৯ সালে ৬৭৫টি বিয়ে ও ৫৩০টি বিচ্ছেদ এবং ২০১৮ সালে ৬৬৯টি বিয়ে ও ৫৫৬টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। বাল্যবিবাহ, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর উদাসীনতা, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, স্বামীর মাদকাসক্তি, দীর্ঘদিন স্বামীর প্রবাসে থাকা, শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, যৌতুকের জন্য চাপ, স্বামীর নির্যাতন—এসব কারণেই বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।উপজেলা নিকাহ রেজিস্ট্রার সমিতির সূত্রে জানা যায়, সখীপুরের ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৪টিসহ মোট ১২টি কাজী অফিস রয়েছে। সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজের একজন ছাত্রী বলেন, ‘বছর দেড়েক আগে দুই পরিবারের সম্মতিতে কচুয়ার প্রবাসী রুবেল নামের এক ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। স্বামী এসএসসি পাস করতে পারেনি। স্বামীর চেয়ে বেশি শিক্ষিত হলে তাকে মানব না, এ যুক্তিতে সে আমাকে পড়াতে চায় না। ছাত্রীনিবাসে থাকার খরচও দেয় না। কয়েক দিন আগে শুনলাম, আমার স্বামী আমাকে তালাকনামা পাঠিয়েছে। তবে এখনো আমি তালাকনামা পাইনি। এখন বাধ্য হয়েই আমার পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

উপজেলার বড়চওনার আরেকজন ছাত্রী জানালেন, স্বামী বিয়ে করে ১৫ দিনের মাথায় বিদেশ চলে যান। বিয়ের সময় শর্ত ছিল, স্ত্রীকে পড়াশোনা করতে দেওয়া হবে। কিছুদিন পর স্বামী বিদেশ থেকে সাফ বলে দেন, আর পড়াশোনা করা যাবে না। মেয়েটি পড়াশোনা চালিয়ে গেলে স্বামী ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। দুই বছর স্বামী খোঁজ না নেওয়ায় স্ত্রীই তালাক দেন।

২০২০ সালে সখীপুরের কাঁকড়াজান ইউনিয়নে বিয়ে হয়েছে ৪৮টি আর বিচ্ছেদ হয়েছে ৬২টি; কালিয়া ইউনিয়নে বিয়ে ১৩০, বিচ্ছেদ ১০২; বহুরিয়া ইউনিয়নে বিয়ে ৩৮, বিচ্ছেদ ১৫; হাতীবান্ধা ইউনিয়নে বিয়ে ৬২, বিচ্ছেদ ৫২, যাদবপুরে বিয়ে ১০৬, বিচ্ছেদ ২৫; গজারিয়া ইউনিয়নে বিয়ে ৪৩, বিচ্ছেদ ২৬; বহেড়াতৈল ইউনিয়নে বিয়ে ৩১, বিচ্ছেদ ৩৯ এবং দাড়িয়াপুর ইউনিয়নে বিয়ে ৭২ ও বিচ্ছেদের সংখ্যা ৩২। পৌরসভার ৪টি কার্যালয়ে ২২৭টি বিয়ে হলেও বিচ্ছেদ ঘটেছে ১২৩টি

সখীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা কাজী সমিতির সভাপতি শফিউল ইসলাম (কাজী বাদল) জানান, বাল্যবিবাহ, স্বামীর বিদেশে থাকা, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কসহ নানা জটিলতা নিয়ে প্রথমে দুই পরিবারে ফাটল ধরে, পরে তা বিচ্ছেদে রূপ নেয়। প্রশাসনের তৎপরতায় আগের তুলনায় এখন বাল্যবিবাহ কম হচ্ছে। ফলে আগের চেয়ে বিবাহবিচ্ছেদও অনেকটা কমে আসছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফিরোজা আক্তার জানান, মেয়েরা এখন সচেতন ও শিক্ষিত। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে এখন মেয়েরা আর আগের মতো নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে চান না।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে