এমসি কলেজে গণধর্ষণ : অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারকে বরখাস্তের নির্দেশ

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২১, ১৫:৪৫

যাযাদি ডেস্ক

 

সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নববধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

 

সেইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

 

আদালতের নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল।

 

এ বিষয়ে জারি করা রুলের রায়ের ধার্য দিনে বুধবার (২ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় দেন।

 

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আশিক রুবাইয়াত, ব্যারিস্টার সারোয়ার পায়েল। অন্যদিকে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান ও এম আব্দুল কাইয়ুম।

 

সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল বলেন, হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ থেকে জারি করা রুল ও তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর গত মার্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি রায়ের জন্য আসে। আজ রায় ঘোষণা করা হয়।

 

২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কলেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। একইসঙ্গে ধর্ষণের ঘটনা অনুসন্ধানে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, মুখ্য মহানগর হাকিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে একটি যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করেন হাইকোর্ট।

 

চার সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিতে সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মো. বজলুর রহমান, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মমিনুন নেসা, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেম ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন সুলতানা ছিলেন। পরে এই অনুসন্ধান কমিটি হাইকোর্টে প্রতিবেদনও দাখিল করেন।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পেছনে মূলত হোস্টেল সুপার ও প্রহরীদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ওই কলেজের অধ্যক্ষও কোনোভাবে ওই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।

 

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে প্রকাশ পাওয়া আলোচিত এমসি কলেজে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও দায় অনুসন্ধানে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অংশে মতামতে এসব কথা বলা হয়।

 

গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের শিকার হন স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এক গৃহবধূ। এরপর পুলিশ ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

 

সেখানে ওসিসিতে তিনদিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান তিনি। ওই রাতেই ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে মহানগরের শাহপরান থানায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।

 

এ ঘটনার পর সিলেটসহ সারাদেশে তোলপাড় শুরু হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আসামিদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযানে চালায়। র‌্যাব-৯ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় চারজনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া সিলেট জেলা পুলিশ দুজনকে, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করে।

 

গ্রেফতারের পর আট আসামিকে পর্যায়ক্রমে পাঁচদিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তারা। জবানবন্দিতে প্রধান আসামি সাইফুর, তারেক, রনি ও অর্জুন ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন।

 

এছাড়া রবিউল ও মাহফুজুর ধর্ষণে সহায়তা করার কথা স্বীকার করেন। সন্দেহভাজন আসামি মিসবাউর রাজন ও আইনুলও জবানবন্দি দেন। এছাড়া গত বছরের ২৯ নভেম্বর আসামিদের ডিএনএ প্রতিবেদন হাতে পান তদন্ত কর্মকর্তা।

 

যাযাদি/এসআই