নিরপরাধ ব্যক্তির জেলখাটা দুর্ভাগ্যজনক: হাইকোর্ট
প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২১, ২১:২৩
চট্টগ্রামে একটি হত্যা মামলায় অর্থের বিনিময়ে নিরপরাধ ব্যক্তির জেলখাটার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। হাইকোর্ট মন্তব্য করেছেন, অর্থের বিনিময়ে বা যে কোনো কৌশলে মূল আসামির নিজেকে বাঁচিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিকে জেলে রাখার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।
এদিকে ঝালকাঠির এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে 'ভুয়া মামলা' করে জেল খাটানোর ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট সিআইডিকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ঝালকাঠিতে ভুয়া মামলায় জেল খাটানোর ঘটনায় করা রিটের ওপর আদেশ দেন। আদেশে রুল জারির পাশাপাশি ঝালকাঠির মামলাটির কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি ৮ আগস্ট আবারও শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আসবে।
আদালতে এ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে ঝালকাঠি থানার রাজাপুরের রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে জাকির হোসেন নামে একজনকে ভুয়া বাদী সাজিয়ে ধানমন্ডির ঠিকানা দিয়ে দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৬/৫০৬ ধারায় মামলা করা হয়। এ মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠানো হয়। আট দিন পর জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি খোঁজ করে ওই ব্যক্তি ও তার ঠিকানার কোনো অস্তিত্ব পাননি। বরং জানতে পারেন, ব্যবসায়িক শত্রুতা থেকে কয়েকজন এ সাজানো মামলা করেছে।
পরে রফিকুল ইসলাম আদালতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেন। পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানায়, বাদীর ঠিকানার কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু মামলার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার বিষয়ে কোনো প্রতিকার না পেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন রফিকুল। হাইকোর্ট এ আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার জড়িতদের শনাক্ত করার আদেশসহ রুল জারি করেন।
জেলে নিরপরাধ ব্যক্তি: 'একজনের নামে আরেকজন জেলে থাকছে- গত দুই বছরে দেশে এমন ২৬টি ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। অথচ প্রকৃত আসামিকে শনাক্ত করার অনেক পদ্ধতি আছে।' রোববার আইনজীবী মো. শিশির মনির এ কথা জানান।
চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীর পরিবর্তে নিরপরাধ মিনুর জেলখাটার শুনানিতে তার আইনজীবী আদালতকে এ কথা জানান। তিনি এ ঘটনার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
এ সময় হাইকোর্ট মন্তব্য করেন, অর্থের বিনিময়ে বা যে কোনো কৌশলে মূল আসামির নিজেকে বাঁচিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিকে জেলে রাখার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি ড. বশির উল্লাহ বলেন, আমরাও চাই নিরপরাধ কেউ যেন জেলে না থাকে; দোষীদের শাস্তি হোক।
পরে আদালত এ মামলার শুনানি সোমবার পর্যন্ত মুলতবি রাখার আদেশ দেন।
নিরপরাধ মিনুর কারাগারে থাকার ঘটনা নজরে এলে গত ২৩ মার্চ এ সংক্রান্ত মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠাতে নির্দেশ দেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভুঁঞা। এরই ধারাবাহিকতায় মামলার নথি হাইকোর্টে এলে এ শুনানি শুরু হয়।
যাযাদি/এসআই