শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

​নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে তিন ঘন্টায় আদালতে চার্জশিট জমা দিলেন সখীপুর থানা পুলিশ

সখীপুর প্রতিনিধি
  ০৯ জুন ২০২১, ২০:৫৮

টাঙ্গাইলের সখীপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টা পাঁচ মিনিটের সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সখীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফয়সাল আহমেদ টাঙ্গাইল আদালতে ওই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন। মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে মামলার সব কার্যক্রম শেষ করে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়ার এটাই বাংলাদেশে প্রথম দ্রুততম ঘটনা বলে জানালেন সহকারী পুলিশ সুপার (সখীপুর সার্কেল) আবদুল মতিন।

বুধবার সকাল নয়টা পাঁচ মিনিটে রুমি আক্তার বাদী হয়ে তাঁর স্বামীকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সখীপুর থানায় মামলা করেন। মামলা রেকর্ড হওয়ার ৩৫ মিনিট পর সখীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ বাসা থেকে আসামি মিজানুর রহমান সবুজকে (৩৮) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আজ দুপুর ১২টার মধ্যে আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আসামি মিজানুর রহমান উপজেলার লাঙুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

সখীপুর থানার উপদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, সখীপুর থানার ওসি স্যারের নির্দেশে মামলাটি সকাল নয়টা পাঁচ মিনিটে থানায় রেকর্ড হয়। এরমাত্র ৩৫ মিনিট পর আসামিকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পাঁচজনের সাক্ষ্য গ্রহণ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা সনদ গ্রহণ (এমসি), উর্ধ্বতন কর্মকর্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ মামলার সব কার্যক্রম সেরে বেলা ১২টা পাঁচ মিনিটে মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তিনি মামলাটি দ্রুত সময়ে অভিযোগপত্র দেওয়ার জন্য মনে মনে পণ করেছিলেন। এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে সাইদুল হক।

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে সাইদুল হক বলেন, এটা বাংলাদেশে প্রথম। মাত্র তিন ঘণ্টায় মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিতে গিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। পুলিশ ইচ্ছে করলে পারে এটা তাঁর দালিলিক প্রমাণ। বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারসহ পুলিশ সদর দপ্তরেও অবগত করা হয়েছে।

মামলার বিবরণ :

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৩ সালের ১৫ নভেম্বর মিজানুর রহমানের সঙ্গে উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নানের মেয়ে রুমির বিয়ে হয়। বিয়ের সময় রুমি আক্তারের বাবা মেয়েকে ৪ ভরি স্বর্ণালংকার দেন। বিয়ের পরের বছর মিজানুর একটি মোটরসাইকেল দাবি করেন। শ্বশুর জামাতাকে দেড় লাখ টাকার একটি মোটরসাইকেলও কিনে দেন। ২০১৭ সালে রুমির গর্ভে সন্তান আসে। আলট্রাসনোগ্রাম প্রতিবেদনে ‘কন্যা সন্তান’ জন্ম নেওয়ার খবরে তিনি অখুশি হন। তাই এক্ষেত্রেও ছেলে না হয়ে মেয়ে হওয়ার কারণে অস্ত্রোপচারের সব খরচ শ্বশুরের কাছে দাবি করেন ওই জামাতা। মেয়ের সুখের কথা ভেবে অস্ত্রোপচারের ২০ হাজার টাকাও পরিশোধ করেন রুমির বাবা। গত দুই বছর আগে চাকরিতে সমস্যার কথা বলে শ্বশুরের কাছ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন ওই শিক্ষক মিজানুর।

রুমির দাবি গত চারমাস ধরে সে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করে নির্যাতন করছেন। কয়েক মাস ধরে বাপের বাড়ি দিন কাটাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকালে রুমি স্বামীর বাসায় গেলে তাঁকে মারধর করে। পরে রুমি সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। আজ সকালে রুমি আক্তার বাদী হয়ে স্বামীকে একমাত্র আসামি করে যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে সখীপুর থানায় মামলা করলে পুলিশ মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক মিজানুরের বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও শ্লীলতাহানিরও অভিযোগ রয়েছে। মিজানুর রহমান সবুজ শিক্ষক নামের কলঙ্ক। তাঁকে সমিতি থেকে বরখাস্ত করা হবে।

উপজেলার লাঙুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, এ শিক্ষক একটু দুষ্টু প্রকৃতির। দ্রুত ম্যানেজিং কমিটির সভায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে