​বুয়েটে শিক্ষার্থী হেনস্তার ঘটনায় তদন্ত কমিটি

প্রকাশ | ২৭ জুলাই ২০২১, ২১:৩২

যাযাদি ডেস্ক

 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ১৯ ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থীকে অনলাইনে হয়রানির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিএসই বিভাগ।

 

বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সিএসই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এ কে এম আশিকুর রহমান।

 

তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা অবগত আছি। শনিবার বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টার মাধ্যমে আমরা প্রথম জানতে পারি। এটি নিয়ে সোমবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

গোপনীয়তার কারণে কমিটির সদস্যদের নাম বলতে রাজি হননি এই অধ্যাপক।

 

কমিটি গঠনের বিষয়ে বুয়েটের ডিরেক্টর অফ স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ারের (ডিএসডব্লিউ) পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত কমিটি আজ থেকে তাদের কাজ শুরু করবে। কমিটি রিপোর্ট দিলে তার ভিত্তিতে বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনি কমিটি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’

 

সিএসই বিভাগের ১৯ ব্যাচের ছেলে সহপাঠীর দ্বারা আরেক নারী সহপাঠীর অনলাইনে হেনস্তার বিষয়টি ২৩ জুলাই রাতে একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী হাফিজুল হক চৌধুরীর ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রথম প্রকাশ্যে আসে।

 

হাফিজুলের পোস্টের সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীকে ভালো লাগত সিএসই ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী জারিফ হোসাইনের। ২০২০ সালের নভেম্বরে বিষয়টি বন্ধু সালমান সায়ীদ, জারিফ ইকরাম ও জায়ীদ মানোয়ার চৌধুরীকে জানান জারিফ।

 

এ বছরের ২৯ মে তিন বন্ধুর প্ররোচনায় ওই নারী শিক্ষার্থীর ইনবক্সে নক দিয়ে নিজের ছবি পাঠানো শুরু করেন জারিফ হোসাইন। তিনি আগ্রহ না দেখালেও একপর্যায়ে ওই নারী শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি পাঠাতে শুরু করেন জারিফ হোসাইন। এতে ওই নারী শিক্ষার্থী রাগান্বিত হয়ে গেলে জারিফ হোসাইন তার কাছে ক্ষমা চেয়ে সেদিনের মতো কথা বলা বন্ধ করে দেন।

 

২২ জুলাই সন্ধ্যায় জারিফ হোসাইন তার তিন বন্ধুর সঙ্গে একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করে ওই নারীর শিক্ষার্থীর ইনবক্সে আবারও বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ ছবি এবং অশ্লীল ভিডিও পাঠানো শুরু করেন। এতে বিরক্ত হয়ে ভুক্তভোগী মেয়েটি পুরো ঘটনা ব্যাচের একটি অভ্যন্তরীণ গ্রুপে জানান।

 

বিভাগের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ ঘটনাটি জানার পর অভিযুক্তদের কাছে এর ব্যাখ্যা দাবি করেন৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে রাত ১০টায় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মিটিংয়ে বসেন। মিটিংয়ে জারিফ হোসাইন ঘটনার দায় এবং এতে বাকি তিন বন্ধুর সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেন। সম্পৃক্ততার প্রমাণ হিসেবে জারিফ হোসাইন ওই নারী শিক্ষার্থীকে মেসেজ দেয়ার আগে এসব বন্ধু থেকে পরামর্শ নেয়ার স্ক্রিনশটও প্রকাশ করেন।

 

ওই স্ক্রিনশট থেকে দেখা যায়, ‘হেল্প মি’ নামের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে জারিফ হোসাইনকে বাকি তিন বন্ধু পরামর্শ দিচ্ছেন ওই নারী শিক্ষার্থীকে কখন কী কী মেসেজ দিতে হবে। আর সে অনুযায়ী জারিফ হোসাইন তাকে মেসেজ দিচ্ছেন।

 

হাফিজুল ইসলামের ওই পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, মিটিংয়ে জারিফ হোসাইনের তিন বন্ধু সালমান সায়ীদ, জারিফ ইকরাম ও জায়ীদ মানোয়ার চৌধুরীও নিজেদের দায় স্বীকার করেন। তারা এটিও স্বীকার করেন যে, তারাই ওই নারী শিক্ষার্থীকে এসব মেসেজ দেয়ার জন্য জারিফ হোসাইনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং ২২ জুলাই সম্মিলিত প্রয়াসে ছবি তুলে দিয়েছেন।

 

ওই নারী শিক্ষার্থীকে পাঠানো জারিফ হোসাইনের অশ্লীল ভিডিওটি জারিফ ইকরামের বাসায় বসে তিনজনের উপস্থিতিতে রেকর্ড করা হয়েছে।

 

২৩ জুলাই সিএসই ডিপার্টমেন্টের ব্যাচ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হেনস্তার সব প্রমাণ সবার সামনে প্রকাশ করা হয়। মিটিংয়েই শিক্ষার্থীরা জারিফ হোসাইন, জারিফ ইকরাম, সালমান সায়ীদ ও জায়ীদ মনোয়ার চৌধুরীকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন। এর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা এই চার শিক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন এবং সব রকম এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের বর্জন করেন।

 

সভা থেকে ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর কাছে লজ্জা প্রকাশ করেন। তারা জানায়, এ ঘটনায় পরবর্তী যেকোনো পদক্ষেপে তারা সার্বিক সহযোগিতা করবেন।

 

বয়কটের বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছেন বুয়েটের ডিরেক্টর অব স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ারের পরিচালক মিজানুর রহমান।

 

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষে কেউ কাউকে আসলে বয়কটের সুযোগ নেই। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ দোষী সাব্যস্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না।’

 

যাযাদি/এসআই