পরীমনির রিমান্ড: হাইকোর্টকে অবজ্ঞা করেছেন দুই বিচারক

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:১২ | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:২০

যাযাদি ডেস্ক

চিত্রনায়িকা পরীমণিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুরের কারণ হিসেবে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট হননি হাইকোর্ট। রিমান্ডের বিষয়ে ওই ব্যাখ্যায় ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের এই দুই বিচারকের একজন লিখেছেন ‘এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল’।  আরেকজন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পরীমণিকে বারবার রিমান্ডের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে মাদকের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের আত্মহত্যার কথা বলেছেন।

 

তাদের এই ব্যাখ্যায় হাইকোর্ট বলেছেন, হাইকোর্টকে অবজ্ঞা করেছেন এই দুই বিচারক। বিষয়টি নিয়ে ফের ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে ২৯ সেপ্টেম্বর। 

 

ব্যাখ্যার বিষয়ে আদালত আরও বলেছেন, ‘ত্রুটি হয়েছে যে তা ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বাস করেন না। হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করা হয়েছে।’

 

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম দুই ম্যাজিস্ট্রেটের দাখিল করা ব্যাখ্যার অংশ আদালতে পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ‘রিমান্ড নিয়ে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের যে গাইডলাইন এবং আমাদের প্রচলিত আইন আছে, এ দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এগুলোর বিরুদ্ধে। যে কারণে তাদের জবাবে আমরা সন্তুষ্ট নই’।

 

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে বিচারকদের লিখিত ব্যাখ্যা মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বুধবার এ লিখিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়।

 

রিমান্ড মঞ্জুরের কারণ তুলে ধরার পাশাপাশি পৃথক লিখিত ব্যাখ্যায় দুই ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশে ত্রুটি–বিচ্যুতি হয়ে থাকলে তা ‘অনিচ্ছাকৃত ও সরল বিশ্বাসে’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ ভুলের ক্ষমা চেয়ে পৃথক ব্যাখ্যা গ্রহণ করে অধিক ব্যাখ্যার দায় থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজিও জানিয়েছেন দুই ম্যাজিস্ট্রেট।

 

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, ‘এই মামলায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে আমরা সন্তুষ্ট নই, যে কারণে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখ রাখলাম’।

 

দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের একজন পরীমণিকে রিমান্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে এলএসডি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের আত্মহত্যা এবং ওই মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরেন।

 

ব্যাখ্যার সেই অংশটুকু পড়ে শুনিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাকে শোকজ করেছি কেন তিনি রিমান্ড মঞ্জুর করলেন। তিনি ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ে কোন ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন সেটার বর্ণনা দিলেন’।

 

এরপর বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক অপর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যাখ্যা পড়ে শোনান। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন, ‘উপরোক্ত বিষয় সার্বিক বিবেচনায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার আদেশের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি নিতান্তই আমার ইচ্ছাকৃত নয়, সরল বিশ্বাসে কৃত ভুল।’

 

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, ‘এখানে যে ত্রুটি হয়েছে তা তিনি বিশ্বাসই করেন না। হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করা হয়েছে।’

 

যাযাদি/ এমডি