৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাপানি দুই শিশু মায়ের কাছেই থাকবে

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১১:০০

যাযাদি ডেস্ক

জাপান থেকে আসা সেই দুই শিশু মায়ের কাছে থাকবে আর বাবা নির্ধারিত সময় অনুযায়ী দেখা করতে পারবেন রোববার (২৩ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ শুনানি আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেন

 

এর আগে ১৫ ডিসেম্বর দুই শিশু জানুয়ারি পর্যন্ত মা ডা. এরিকো নাকানোর কাছে থাকবে বলে আপিল বিভাগ আদেশ দেন তবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবা ইমরান শরীফ সময়ে স্বাধীনভাবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যে কোনো সময় শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন

 

জানুয়ারি শুনানি ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করে আদেশ বহাল রাখা হয় তার ধারাবাহিকতায় আজ শুনানির জন্য উঠলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করে আগের আদেশ বহাল রাখা হয় আদালতে মায়ের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট আজমালুল হোসেন কিউসি সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির বাবার পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফিদা এম কামাল আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ

 

গত ২১ নভেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিষয়ে রায় দেন রায়ে আদালত বলেন, রিটটি চলবে দুই মেয়ে পাঁচ নম্বর বিবাদীর (ইমরান শরীফ) হেফাজতে থাকবে মা দেখা-সাক্ষাৎ এবং একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন যেহেতু মা জাপানি নাগরিক এবং সেখানে বসবাস কর্মরত আছেন সেই কারণে তিনি তার সুবিধা মতো সময়ে বাংলাদেশে এসে শিশুদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন সময় কাটাতে পারবেন এক্ষেত্রে বছরে তিনবার বাংলাদেশে যাওয়া-আসাসহ ১০ দিন অবস্থানের সব ধরনের খরচ পাঁচ নম্বর বিবাদীকে (ইমরান শরীফ) বহন করতে হবে এর বাইরে যাওয়া-আসার খরচ দরখাস্তকারী (মা) বহন করবেন ছুটির দিনে অন্তত দুবার শিশুদের সঙ্গে ভিডিওকলে মাকে কথা বলিয়ে দেবেন ইমরান শরীফ গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে অবস্থান যাতায়াত খরচ বাবদ আগামী সাত দিনের পাঁচ নম্বর বিবাদী দরখাস্তকারীকে ১০ লাখ টাকা দেবেন

 

রায়ে আরও বলা হয়, রিটটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশ প্রতিপালিত না হলে বা অন্য কোনো আদেশের জন্য আদালতে পক্ষগুলো আসতে পারবে সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তা শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখবেন তাকে প্রতি তিন মাস পর পর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে জাপানে থাকা ছোট মেয়ে হেনাকে হাইকোর্টে হাজির করানোর নির্দেশনা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট পরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক ইমরান শরীফ জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানোর দুই শিশু বাবার জিম্মায় থাকবেন বলে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়

 

মা এরিকো নাকানোর আবেদন ডিসেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১২ ডিসেম্বর শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছিলেন  এরিকোর আইনজীবী শিশির মনিরের তথ্যমতে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো (৪৬) বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন তাদের ১২ বছরের সংসারে তিনজন সন্তান জন্ম নেয় 

 

তারা হলো- জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) সানিয়া হেনা () এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল

 

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে ডিভোর্স আবেদন করেন এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে পরে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান চারদিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন আদালত , ১১ ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন

 

এদিকে ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন

 

গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে জেসমিন লিনার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন পরে ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন পরে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন এরই ধারাবাহিকতায় আদালত গুলশানে একটি ভাড়া বাসায় সবাইকে আলাদা কক্ষে বসবাসের অনুমতি দেন পাশাপাশি সমঝোতা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন কিন্তু উভয়পক্ষের আইনজীবীরা কয়েকবার বৈঠকেও সমঝোতায় আসতে পারেনি সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মেয়েদের এরিকোর সঙ্গে গুলশানের বাসায় থাকার আদেশ দেন আর বাবা ইমরান শরীফকে দিনের বেলা তাদের সঙ্গে দেখা সময় কাটাতে পারবেন বলে সুযোগ দেন পরে ৩১ অক্টোবর রিটের শুনানি শেষে ২১ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট

 

যাযাদি/এসএইচ