সম্রাট হত্যায় মামলা দায়ের; লাপাত্তা বন্ধু মমিন  

সীমাকে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৩, ১০:০৯

পাবনা প্রতিনিধি
মমিন ও সম্রাট

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নিকিমত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গাড়িচালক সম্রাট হোসেন হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। পলাতক রয়েছে বন্ধু আব্দুল মমিন। পুলিশ অধিকতর তথ্য উদঘাটনে মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুনকে আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জর করেছে। 

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার জানান, শনিবার (২৫ মার্চ) দিবাগত রাতে নিহতের বাবা আবু বক্কার বাদি হয়ে ঈশ^রদী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সম্রাটের বন্ধু আব্দুল মমিন ও তার স্ত্রী সীমা খাতুনকে নামীয় আসামীসহ অজ্ঞাত আরো ৩ থেকে ৪ জনকে আসামী করা হয়েছে। 

ওসি জানান, এর আগে শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্রাটের বন্ধুর স্ত্রী সীমা খাতুনকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর তিনি পুলিশের কাছে হত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিয়েছেন। সেগুলোর সত্যতা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তারপর বোঝা যাবে ঠিক কি কারণে সম্রাটকে হত্যা করা হয়েছে। সেইসাথে সম্রাটের বন্ধু মমিনকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে। 

ওসি অরবিন্দ সরকার জানান, আটককৃত সীমা খাতুনের রিমান্ড চেয়ে তাকে রোববার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক শামসুজ্জোহার আদালতে হাজির করা হয়।  সেখানে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক শুনানী শেষে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। 

তবে, নিহত সম্রাটের বাবা আবু বক্কারের দাবি, সম্রাটের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে বন্ধু মমিন ও তার স্ত্রী সীমা মিলে সম্রাটকে হত্যা করেছে। তাদের সাথে আরও মানুষ জড়িত থাকতে পারে।

লাশ উদ্ধারের পর প্রাডো জিপ গাড়ীর মালিক আনিসুর রহমান বলেন, আটক মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুন পুলিশকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে সম্রাট আমার বাসায় আসে। আমাকে বলে তার মাথা ধরেছে বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আমার স্বামী মমিন ঔষধ আনতে গেলে সম্রাট আমার শরীওে হাত দেয়। আমি রাগে ও ক্ষোভে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় ও গোপানাঙ্গে আঘাত করলে সে মারা যায়। পওে আমার স্বামী বাসায় ফিরলে লাশ বস্তায় ভওে ওই গাড়ীতে তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরি করার পর আমার স্বামী আমাকে গাড়ী থেকে নামিয়ে দিয়ে শিলাইদহে গাড়ী রেখে সটকে পড়ে।

নিহত সম্রাট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আরডিবি নামে একটি যানবাহন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ান নিকিমত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফরি ফেদারোপের ব্যবহৃত গাড়িটি চালাতেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ওসি অরবিন্দ সরকার।

এদিকে, সম্রাট হোসেন হত্যার পর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার বন্ধু প্রধান আসামী আব্দুল মমিন (৩১)। এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পায়নি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে লাশ উদ্ধারের পর একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মাথায় তা হলো, সম্রাটকে হত্যার কারণ ‘টাকা নাকি পরকীয়া’?

নিখোঁজের দুইদিন পর শনিবার সকালে পাবনা-কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী পদ্মানদীর শিলাইদহ ঘাট এলাকা থেকে রূপপুর প্রকল্পের নিকিমত কোম্পানির গাড়িচালক সম্রাট হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হয় নিকিতম কোম্পানীর এমডির ব্যবহৃত বিলাসবহুল প্রাডো জিপ গাড়িটি।

নিহত সম্রাট পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মধ্য অরণকোলা আলহাজ্ব ক্যাম্প এলাকার আবু বক্কারের ছেলে। রূপপুর প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে সম্রাটের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয় একই উপজেলার বাঁশেরবাদা গ্রামের আব্দুল মমিনের।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, শনিবার দুপুরের পর আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যার পর দাফন সম্পন্ন হয়। 

যাযাদি/ এস