আজিজ-হান্নানসহ দুদকের জালে শীর্ষ ১০ সামরিক অফিসার
প্রকাশ | ০৮ জুন ২০২৫, ১০:৩৪

সরকার বদলের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এবার তাদের অভিযানের আওতায় এসেছে সামরিক বাহিনীর সাবেক ১০ জন শীর্ষ কর্মকর্তা। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিপুল অঙ্কের অর্থপাচারের।
দুদক সূত্র জানায়, এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত শুরু হয়েছে। কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের তালিকায় কারা?
১. জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ – সাবেক সেনাপ্রধান
অভিযোগ: ক্ষমতার অপব্যবহার, শত কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন, হুন্ডির মাধ্যমে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে অর্থপাচার।
দুদকের চার সদস্যের কমিটি এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে তার ভিসা বাতিল করেছে।
২. এয়ার চিফ মার্শাল (অব.) শেখ আব্দুল হান্নান – সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান
অভিযোগ: রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়, ঘুষ, অবৈধ সম্পদ।
তার ও স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব ও ফ্ল্যাটসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
৩. মেজর জেনারেল টি এম জোবায়ের – সাবেক এনএসআই মহাপরিচালক
অভিযোগ: চাকরিতে ঘুষ, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সম্পদ অর্জন, লন্ডনে অর্থপাচার।
ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা।
৪. মেজর জেনারেল (অব.) মো. সিদ্দিকুর রহমান – সাবেক রাজউক চেয়ারম্যান
অভিযোগ: রাজউকের প্রকল্পে দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ।
তার ও স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, অনুসন্ধান চলমান।
৫. মেজর জেনারেল (অব.) সালাউদ্দিন মিয়াজী – সাবেক সামরিক সচিব
অভিযোগ: জমি দখল করে পার্ক নির্মাণ, দুর্নীতির মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ।
যশোরে রিসোর্ট থেকে গ্রেপ্তার, কারাবাসের পর জামিনে মুক্ত।
৬. মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক – সাবেক ডিজিএফআই প্রধান
অভিযোগ: আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ আত্মসাৎ।
তাকে ও স্ত্রীকে বিদেশযাত্রা থেকে বিরত রাখতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা।
৭. লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মজিবুর রহমান – সাবেক এসএসএফ ডিজি
অভিযোগ: স্ত্রীসহ বিপুল সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার।
দুটি বাড়ি, ১০টি প্লট ও ১৬টি ব্যাংক হিসাব জব্দ।
৮. লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী – সাবেক এমপি
অভিযোগ: মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে দুর্নীতি ও অবৈধ ব্যবসা।
ফেনীর সাবেক এমপি ও অন্যান্যদের সঙ্গে ১৬টি মামলা হয়েছে।
৯. মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান – এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক
অভিযোগ: ৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন।
তার বিরুদ্ধে দুদক দুটি মামলা করেছে। বিদেশে ব্যাংক একাউন্টেরও তথ্য মিলেছে।
১০. নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেলের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে, যিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।
দুদকের অবস্থান
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, “প্রত্যেকটি অভিযোগ নিয়ম অনুযায়ী যাচাই করা হচ্ছে। অনুসন্ধান শেষ হলে কমিশনে প্রতিবেদন জমা পড়বে, তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কারো পক্ষ থেকেই গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বা কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের এভাবে দুর্নীতির জালে ধরা পড়া দেশবাসীর মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। এই অনুসন্ধান প্রমাণ করছে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।