যে অভ্যাসগুলো সম্পর্কের জন্য হুমকি স্বরূপ

প্রকাশ | ২৪ মে ২০২৩, ১৪:৪৬

যাযাদি ডেস্ক

সঙ্গীকে অপমান করা, কটাক্ষ করা যাবে না এটা তো সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়। তবে এমন কিছু অভ্যাসও আছে যা আপাত দৃষ্টিতে ধ্বংসাত্মক মনে না হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা সম্পর্কের ওপর কুপ্রভাব ফেলে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘কাপল’স থেরাপিস্ট’ এবং ‘রিলেশনশিপ কাউন্সিলিং প্ল্যাটফর্ম ‘আওয়ার’য়ের প্রতিষ্ঠাতা এলিজাবেথ আর্নশ ‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড’ ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “এই অভ্যাসগুলোর অধিকাংশের পেছনেই উদ্দেশ্য হয় মহৎ। আর সেই কারণেই একজন মানুষ মনে করেন তিনি সম্পর্কের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করছেন। তবে হয় আসলে হিতে বিপরীত।”

সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়া

প্রতিটি সম্পর্কের সঙ্গে কিছু দায়িত্ব, কর্তব্য জড়িয়ে থাকে যা দুজনার ওপরেই বর্তায়। দাম্পত্য জীবনের ক্ষেত্রে বলতে গেলে ঘরের কাজ, সন্তানের লালনপালন, সামাজিকতা বজায় রাখা, পরিবারের দিকে খেয়াল রাখা ইত্যাদি মুখ্য।

আর্নশ বলেন, “আমি প্রায়শই দেখি সম্পর্কের শুরু থেকেই দুজনার মধ্যে একজন বেশিরভাগ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় আর অপরজন দায়িত্ব নিতেই চায় না কিংবা চাইলেও খুঁজে পায় না কী করতে হবে। যিনি বাড়তি দায়িত্ব নিচ্ছেন তার ভাবনা হল সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি চান খুঁটিনাটি কাজগুলো নিজেই সেরে ফেলতে। পরে ব্যস্ততা বাড়ে, দায়িত্ব বাড়ে এবং এক পর্যায়ে নিজেই নিজের ঘাড়ে তুলে নেওয়া বাড়তি দায়িত্বগুলো হতাশা বাড়াতে থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “এখানে বুদ্ধিমানের কাজ হবে সঙ্গীর যে দায়িত্বগুলো আপনি কাঁধে তুলে নিয়েছেন তা বোঝা হয়ে ওঠার আগেই ভারসাম্য আনতে হবে। অন্যথায় একটা সময় পরিস্থিতি এমন হয়ে যাবে যে সব দায়িত্বই আপনার একার হয়ে যাবে।”

শখ যখন বোঝা

বিভিন্ন ধরনের শৌখিনতা আছে এমন একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয় এবং রোমাঞ্চকর। কিছু শখ আপনার নিজেরও আছে। এই দুই মানুষের জীবন যখন একসঙ্গে জড়াবে তখন দুজনার শৌখিনতার যোগফল হয়ে অবাস্তব হয়ে দাঁড়াতে পারে।

দৈনন্দিন জীবনযাত্রার দায়িত্ব, কর্তব্যগুলো পালন করার পর দুজনের শখগুলো পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। 

আর্নশ বলছেন, “নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত দম্পতিদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা খুব দেখা যায়। দুজনই দুজনের কর্মজীবন নিয়ে অত্যন্ত ব্যস্ত, নিজেদের স্বপ্নপূরণের জন্য নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এর বাইরে যে সময়টা বাঁচে তাতে সংসারের কাজ সামাল দিতে হয়। তারপরও যদি কিছু সময় বেঁচে যায় তবে নিজেদের শখগুলোর দিকে নজর দেন তারা। তারপর তাদের প্রশ্ন থাকে আমাদের নিজেদের মধ্যকার ঘনিষ্ঠতা কোথায় হারিয়ে গেলো? কেনো আমাদের প্রায়শই ঝগড়া হচ্ছে?”

তিনি আরও বলেন, “এখানে সমস্যা হল, কোনটা আপনার জন্য কতটুকু জরুরি তার বাছবিচার না করে আপনি সবকিছুতেই রাজি। এই দম্পতিরা চান একে অপরের শখগুলোর প্রতি সহযোগিতাশীল হতে, যা নিঃসন্দেহে ভালো দিক। কিন্তু সেই ডামাডোলে নিজেদের জন্যই আর সময় মেলে না। তাই নতুন যে কোনো কিছুতে যোগ দেওয়ার আগে সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি।” 

মানসিক চাপ মনের মধ্যে জমে গেছে

আর্নশ বলছেন, “দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডার পর কখনও কী এমন বলেছেন যে দোষ আসলে তোমার না, আমিই অনেক চাপের মধ্যে আছি। যদি এমন হয়ে থাকে তবে আপনি বুঝতেই পারছেন মানসিক চাপ কতটা সহজেই আপনার সম্পর্কগুলোর ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে।”

মানসিক চাপ আবার মনের মধ্যে পুষে রাখলেও চাপ বাড়ে। তাই সঙ্গীর সঙ্গে আপনার মনের কথাগুলো যদি ভাগাভাগি না করেন তবে সেটাও মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

এর বাহ্যিক বহিঃপ্রকাশ দুরকম হতে পারে। হয় আপনি প্রচণ্ড খিটখিটে মেজাজে থাকবেন নয়ত নিজেকে সবার থেকে দূরে সরিয়ে এনে চুপচাপ পড়ে থাকবেন। দুটোই সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।

তিনি আরও বলেন, “তাহলে সমাধানের উপায় কী? দুজন মিলে মানসিক চাপ মোকাবেলা করা, নিজেদের মধ্যে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে হালকা হওয়া। এরজন্য দুজনার মধ্যে সারাদিনই নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাগুলো নিয়ে আলাপ হওয়া জরুরি।”

প্রযুক্তি ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা থাকা

দুজনার সম্পর্কের মাঝে টানাপোড়নের কারণ যেন প্রযুক্তির ব্যবহার না হয় সেদিকে নজর থাকা জরুরি। নিজেদের জন্য যতটুকু সময় পান তা্ উপভোগ করুন, ফোন ব্যবহার করে তা নষ্ট করবেন না।

আর্নশ বলেন, “অনেকেই বুঝতে পারেন না যে প্রযুক্তি তাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা প্রভাব ফেলে। সঙ্গীর সঙ্গে বসে থাকা অবস্থায় আপনার মনোযোগ যদি ফোনের দিকে থাকে তবে সঙ্গী নিজেকে গুরুত্বহীন মনে করবে। মহামারীকালে ঘরে বসে কাজ করার ধারণা প্রচলিত হওয়া কারণে কর্মজীবন আর ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যকার সীমারেখা হয়েছে আরও মলিন।”

“দুজন একসঙ্গে বসে আছেন, ফোন কিংবা ল্যাপটপটা পাশে রাখা আছে। আপনি হয়ত ভাবছেন, একসঙ্গে সময় তো কাটছেই, কিন্তু আসলেই কী তাই? দুজনার প্রতি মনযোগ কী আছে? এমন পরিস্থিতিতে ঘণ্টা পেরিয়ে যায় দুজনার মধ্যে কোনো কথা হয় না। মনোযোগ থাকে ওই মোবাইল কিংবা ল্যাপটপের দিকেই।”

ত ওই প্রযুক্তি পণ্যগুলো যদি হাতের কাছে না থাকত তবে ঠিকই দুজনার মধ্যে গল্প হত। তাই মুখ্য বিষয় একসঙ্গে থাকা নয়, দুজন দুজনার প্রতি মনোযোগ থাকা। 

তিনি পরামর্শ দেন, “প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ম তৈরি করে নিতে পারেন নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে। যেমন নিজেরা আলাপ করার সময় কিংবা একসঙ্গে বসে খাওয়ার সময় কোনো ফোন হাতে নেওয়া চলবে না। আবার প্রযুক্তিই যে সব দোষের ভাগিদার তাও কিন্তু নয়। দুজন মানুষ পাশাপাশি বসে একে অপরের সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমেও আলাপ করতে পারেন। আবারও একে অপরের প্রতি মনযোগটাই মূল বিষয়।”

যাযাদি/ এসএম