হাতকড়া পরে চায়ের দোকান চালান যুবক, কারণ কী ?
প্রকাশ | ১৭ জুন ২০২৫, ১৭:৩৮

ভারতের অলিগলিতে চায়ের দোকানের অভাব নেই, যেখানে এক কাপ চায়ে চুমুক দিয়ে ক্লান্তি দূর করেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু রাজস্থানের অন্তা শহরের একটি চায়ের দোকান কেবল চা বিক্রি নয়, এক অসামান্য প্রতিবাদের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দোকানের নাম, 'সেকশন ৪৯৮এ টি কাফে', যা প্রথম দর্শনেই যে কারোর মনে প্রশ্ন জাগাবে।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারাটি সাধারণত স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অত্যাচার থেকে মহিলাদের রক্ষায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই চায়ের দোকানের মালিক, ২৯ বছর বয়সী কৃষ্ণকুমার ধাকড়, যিনি 'কেকে' নামেই পরিচিত, এই ধারার অপব্যবহারের শিকার হয়েছেন দাবি করে অভিনব প্রতিবাদ শুরু করেছেন।
দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা আছে, "যতক্ষণ না তিনি ন্যায়বিচার পাবেন, ততক্ষণ তাঁর চা ফুটতে থাকবে।" দোকানের একপাশে দেখা যায় একটি লাল পাগড়ি, যা সাধারণত বর বিয়েতে পরেন, তাতে বরমাল্য ঝুলছে। কেকে-এর হাতেও দেখা যায় একটি হাতকড়া, যা তাঁর প্রতিবাদের প্রতীক।
মধ্যপ্রদেশের নিমাচ জেলার বাসিন্দা কেকে, বর্তমানে রাজস্থানের অন্তা শহরে মায়ের সঙ্গে একটি টিনের ঘরে থাকেন এবং চায়ের দোকান চালান। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে অন্তা শহরের এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সব ঠিকঠাকই চলছিল। তারা দুজন মিলে মধ্যপ্রদেশের আঠানা শহরে একটি ব্যবসাও শুরু করেন, যেখানে মহিলাদের ব্যবসায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য কেকে বেশ সুনামও অর্জন করেছিলেন।
কিন্তু ২০২২ সালে হঠাৎই তাঁর স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যান। এর কয়েক দিনের মধ্যেই কেকে-এর বিরুদ্ধে ৪৯৮এ ধারা অর্থাৎ পণের দাবিতে অত্যাচার এবং ১২৫ ধারা অর্থাৎ খোরপোশের দাবিতে মামলা দায়ের করেন তাঁর স্ত্রী।
এই ঘটনা কেকে-কে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। তিনি ভেবেছিলেন, এটিই হয়তো তাঁর জীবনের শেষ। কিন্তু মায়ের কথা ভেবে তিনি প্রাক্তন স্ত্রীর শহর অন্তাতেই ফিরে আসেন এবং একটি টিনের চালের ঘরে মাকে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেন। সংসার চালানোর জন্য তিনি তাঁর আগের ব্যবসা ছেড়ে চায়ের দোকানকেই বেছে নেন।
কেকে জানান, তাঁর চায়ের দোকানের নাম এবং তাঁর হাতের হাতকড়া - সবকিছুই এক প্রতিবাদের ভাষা। তাঁর এই প্রতিবাদ কোনো নারীর বিরুদ্ধে নয়, বরং মহিলাদের সুরক্ষায় যে আইন তৈরি হয়েছে, তার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে। তিনি দাবি করেন, তিনি একা নন, এমন অনেক পুরুষ আছেন যাঁরা এই আইনের অপব্যবহারের শিকার।
কেকে-এর মতে, তাঁর এই চায়ের দোকান শুধুমাত্র তাঁর রোজগারের মাধ্যম নয়, এটি একটি বিচারালয়ও, যেখানে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অন্যদের সচেতন করতে চান এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে চান।
— সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা