শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রুপার গহনায় অপরূপা

শাড়ি কিংবা ফতুয়া, সাধারণ অনুষ্ঠান কিংবা বিয়েবাড়ি, বর্ষা কিংবা হেমন্ত সবকিছুর সঙ্গে তাল মেলাতে রুপার গহনার জুড়ি নেই। আর তাইতো বাঙালি নারীর পছন্দের তালিকায় এখন অবস্থান করে রুপার তৈরি সব গহনা। সময়ের পরিবর্তনে রুপার গহনার ডিজাইনেও এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। ঐতিহ্যবাহী রুপার গহনা গ্রামবাংলার গ-ি পেরিয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে হাল ফ্যাশনের জগতে। লিখেছেন সোরিয়া রওনাক
নতুনধারা
  ২৭ অক্টোবর ২০২০, ১৭:০০
ধীরে ধীরে রুপার জায়গা দখল করে নিয়েছিল সোনা, মেটাল এবং বিভিন্ন পাথরের গহনা। রুপার বাজারে তখন একটু ভাটাই পড়েছিল বলা চলে। কিন্তু সময় ঘুরে আবারও নারীর পছন্দের শীর্ষে চলে এসেছে রুপার গহনা। সময়ের পরিবর্তনে রুপার গহনার ডিজাইনেও এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। ঐতিহ্যবাহী রুপার গহনা গ্রামবাংলার গ-ি পেরিয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে হাল ফ্যাশনের জগতে।
রুপার গহনার প্রচলন আমাদের দেশে সব সময় ছিল। তবে সময়ের পরিক্রমায় বেড়েছে এর চাহিদা ও আকর্ষণ। আজকাল রুপার অলঙ্কারের কদর ঘরে ঘরে। উৎসব, উপলক্ষ ভেদেও এর ব্যবহার দেখা যায়। যে কারণে এর চাকচিক্য আর বৈশিষ্ট্যেও যোগ হয়েছে আধুনিকতা। রুপার গহনা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলেই নজর কেড়ে নেয় অসংখ্য ডিজাইন। বিয়ের কনের সাজে নানা রকম গহনার প্রয়োজন হয়। স্বর্ণের উচ্চমূল্যের জন্য এখন কানের দুল, গলার নেকলেস, হাতের বালা, চুড়ি, আংটি ছাড়া অন্যান্য গহনায় রুপা ব্যবহার করার প্রচলন ব্যাপক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এতে স্বর্ণের রঙ করা থাকে। এসব গয়নার মধ্যে আছে টিকলি, সিতাহার, মানতাসা, রতনচূড়, ঝুমুর, মাথার মুকুট, খোঁপার ক্লিপ, পায়ের নূপুর, কোমরের বিছা ইত্যাদি। এছাড়া স্কার্ফ, শাড়ি, ওড়নায় আটকানোর ক্লিপ, চুলের নানা ডিজাইনের ক্লিপসহ বেশ কিছু গহনা বেশ চলছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনের তৈরি এসব অলঙ্কার তরুণীদেরও বেশ পছন্দের। এগুলোর বাজারমূল্যও সাধ্যের ভেতরে থাকায় ক্রেতার সংখ্যাও কম নয়।
রুপার গোল্ডপ্লেটেড পাথর বসানো আংটি, চুড়ি, ব্রেসলেট, রুপার মল, গলার হার ইত্যাদির ব্যবহার বেড়ে চলেছে। বাজারে অক্সিডাইজ রঙের রুপার মলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ফ্যাশন-সচেতন নারীদের কাছে রুপার গহনা এখন পছন্দের তালিকায় প্রথম সারিতে। নারী ক্রেতাদের পাশাপাশি পুরুষের কাছেও রুপার ব্রেসলেট ও কানের রিং পাচ্ছে সমান জনপ্রিয়তা।
শাড়ি কিংবা ফতুয়া, সাধারণ অনুষ্ঠান কিংবা বিয়ে বাড়ি, বর্ষা কিংবা হেমন্ত সবকিছুর সঙ্গে তাল মেলাতে রুপার গহনার জুড়ি নেই। আর তাইতো বাঙালি নারীর পছন্দের তালিকায় এখন অবস্থান করে রুপার তৈরি সব গহনা। অনেকে আবার রুপার গহনায় গোল্ড প্লেটের কাজ করিয়ে গয়নায় আনছেন নতুনত্ব। ভারি কাজের গয়না হিসেবে গোল্ড প্লেটের কাজ করা রুপার গহনা বেশ চলছে এখন।
কোথায় পাবেন, কেমন দামে
রুপার গহনা বললেই প্রথমে চলে আছে দেশি হাউস আড়ংয়ের কথা। নানা ধরনের, নানা বাহারের রুপার গহনা পাবেন এখানে। রুপার মল, নাকফুল, আংটি, চুড়ি, ব্রেসলেট থেকে শুরু করে গলার হার পর্যন্ত নানা নকশার গহনা পাওয়া যাবে। দাম নির্ভর করবে কী কিনছেন, তার ওপর।
ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’স এ পাবেন আধুনিক ডিজাইনের রুপার গহনা। এই ফ্যাশন হাউসের গহনার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা মোটিফ ডিজাইনে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া বসুন্ধরা সিটি, গাউসিয়া, ইস্টার্ন মল্লিকা, মেট্রো শপিং মলেও পাবেন রুপার গহনা। আর চাইলে নিজেও বানিয়ে নিতে পারেন মহল্লার জুুুুুুুয়েলারি থেকে।
ডিজাইন ও আকার ভেদে প্রতিটি রুপার নাকফুলের দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। কানের দুল ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বালা ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। টিকলি দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। ব্রেসলেট ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা, খাড়ু ও বাজু ২ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা, মাদুলি সেট আড়াই হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। গহনার সেট কিনতে খরচ হবে দশ হাজার থেকে পনের হাজার টাকার মধ্যে। তবে জাঁকজমকপূর্ণ গহনার সেট কিনতে হলে খরচ করতে হবে ৫০ হাজার টাকার বেশি।
রুপার গহনার যতেœ জানা ভালো যে বিষয়গুলো
শখ করে রুপার গহনা বানালেন কিন্তু কিছুদিন ব্যবহারের পরই তা কালো হয়ে গেল। নিশ্চয়ই তখন মন খারাপ হবে আপনার। এর চেয়ে বরং জেনে নিন কি করে রুপার গহনার যতœ নেবেন।
বাইরে থেকে ফিরে এসেই রুপার গহনাকে বাক্সে রেখে দেবেন না। বরং কিছুটা সময় বাইরে বাতাসে রাখুন। এরপর টিস্যু পেঁচিয়ে সুন্দর করে রাখুন। মনে রাখবেন অন্যান্য গহনার সঙ্গে রুপার গহনাগুলো না রেখে সেগুলোকে আলাদা রাখুন। সোনা আর রুপার গহনা এক সঙ্গে রাখলে রুপার বর্ণ কালচে হয়ে যায়।
রুপার গহনা কালো হয়ে গেলে একটি বাটিতে তেঁতুল গুলে নিয়ে সেই পানিতে গয়না ১০-১৫ মিনিট রেখে ব্রাশ দিয়ে ঘষে নিন। উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। এছাড়া হালকা গরম পানিতে সাদা টুথপেস্ট গুলিয়ে গয়না পরিষ্কার করুন। দেখবেন কালচে ভাব চলে যাবে। আরও একটা ভালো রুপার লালচে ভাব তুলতে পানিতে লবণ ও খাবার সোডা মিশিয়ে গহনা ২ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ব্রাশ দিয়ে হালকা পরিষ্কার করে শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। দেখবেন লালচে ভাব কেটে গেছে।
রুপার গহনার উপর টমেটো ক্যাচাপ দিয়ে ১৫ মিনিট রেখে নরম কাপড় দিয়ে আলতো ভাবে ঘষে নিন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। রূপার কালচে ভাব দূর করার জন্য চুলের কন্ডিশনার খুব ভালো মাধ্যম। তাছাড়া তেঁতুল দিয়ে ঘষেও চকচকে করা যায়। গোল্ড প্লেটেড গয়হা কালো হয়ে গেলে সোনার দোকান থেকে রঙ করিয়ে নিন। হালকা গরম পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়েও রুপার গহনা পরিষ্কার করে নিতে পারেন সহজে।
সাজে এবং সৌন্দর্যে রুপার গহনা জায়গা করে নিয়েছে নিজের গুণে। হালকা-গাঢ় সব রঙের পোশাকের সঙ্গেই রুপার গহনা মানিয়ে যায় সহজে। সালোয়ার কামিজ এবং ফতুয়ার সঙ্গেও রুপার বড় দুল ও নেকলেস বেশ চলে যায়। শাড়ির সঙ্গে পরার জন্যও বেছে নিতে পারেন রুপার ভারি গহনা। বাঙালি নারীর পছন্দে তাই রুপার গহনার অবস্থান শীর্ষে।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে