নটে শাকের ৯ গুণ
প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২৫, ১০:০৭ | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১৫:৩২

শরীরের পক্ষে পুষ্টিকর এবং উপযোগী সব তত্ত্ব পাওয়ার জন্যে এবং ভিটামিন সি এর জন্যে সবুজ শাক খাওয়া খুবই জরুরি। প্রায় সব শাকেই অ্যালকলি ক্ষারজ বা ক্ষার পদার্থ বেশি। সবুজ শাকের মধ্যে নটে শাকের আছে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ শাক এবং দামেও সস্তা।
বাজারে সাধারণত দু ধরনের নটে শাক পাওয়া যায়। সবুজ নটে ও লাল নটে। আর এক রকমের নটে শাক হল কাঁটা নটে। নটে শাকের শিকড় ও পাতা নানা রোগে ওষুধ হিসেবেও খাওয়া হয়।
সবুজ নটে শাকের চেয়ে লাল নটে শাকই বেশি উপকারী নটে শাক হিন্দিতে যার নাম চৌলাই গরমকালে আর বর্ষাকালেই অধিক জন্মায়। গরমকালে আর বর্ষাকালের বদহজম বা হজমের গোলমাল থেকে নটে শাক শরীরকে মুক্ত রাখে।
এই দুই কেতুতেই এই শাকের ফলন ও হয় খুব এবং বাঙালি বাড়িতে ওই শাকের ভাজা ও চচ্চড়ি খাওয়াও হয় খুব। এই শাক সহজে হজম হয় অর্থাৎ লঘু পাক ও হালকা আহার। নটে শাক ভাজায় আছে অনেক গুণ।
কাজেই গরমকালে ও বর্ষাকালে নটে শাক ভাজা তো শরীরের পক্ষে ভালো কাজ করে। নটে শাকের কচি পাতা খেলে (ভাজা বা চচ্চড়ি হিসেবে কিংবা সেদ্ধ করে অল্প তেল লবন দিয়ে মেখে ভাতে হিসেবে, বড়ি বেগুন মুল্লো দিয়ে ঘন্ট রান্না করে) মল পরিষ্কার হয়, গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখে, রক্তের দোষ দূর করে অর্থাৎ রক্ত পরিষ্কার করে এবং পথ্য হিসেবে উপকারী।
আর একটি নতুন পদ্ধতিতে নটে শাক খেয়ে দেখতে পারেন। নটে শাক অল্প তেলে নেড়েচেড়ে নিয়ে, পানি ও পরিমাণ মতো লবন মিশিয়ে সেদ্ধ করে নিন। নামাবার আগে কাঁচা আমের কুচি বা একটু ঘোল মিশিয়ে দিন। খেতে ভালই লাগবে শরীরের পক্ষেও ভাল ।
সুস্থ থাকতে নটে শাক:
১. রক্তের দোষ দূর করতে:
যদি শরীর গরম হওয়ার দরুণ বা যে কোনো কারণে রক্তের দোষ ঘটে এবং সেই কারণে চুলকুনি হয় তাহলে নিয়মিত নটে শাক ভাজা খেলে উপকার পাওয়া যায়। কুষ্ঠ রোগ, শরীর জ্বালা, লিভার ও পিত্তের অসুখেও নটে শক উপকার দেয়।
২. গ্রীষ্মকালীন রোগ সারাতে: গরমকালের নিয়মিত নটে শাক ভাজা খেলে অনেক রোগ সারে যায়। এছাড়া যাঁরা অসুস্থ তাঁদেরও নটে শাক খাওয়ানো যেতে পারে কারণ নটে শাক খেলে কোনো অপকার হবে না।
যদি সম্ভব হয় গরমকালে ও বর্ষাকালে অর্থাৎ নটে শাক যখন বাজারে প্রচুর পাওয়া যায় ও দামে সস্তা প্রতিদিন নিয়ম করে ভাতের সঙ্গে নটে শাক ভাজা, চচ্চড়ি, ভাতে বা ঘণ্ট খান অনেক রোগের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবেন।
এই সব গুণের জন্যেই তো নটে শাককে বিষয় বলা হয়। তা ছাড়া সব রকম বিষের ক্রিয়া নাশের পক্ষেই নটে শাক হল সবচেয়ে সুলভ, সস্তা, সহজ ও অব্যর্থ ওষুধ।
৩. নারীস্বাস্থ্য বিষয়ক:
নটে শাক খুব উপকারী। অনেক রোগেরই সুলভ, সস্তা, সহজ ও ঘরোয়া ওষুধ। যন্ত্রণাদায়ক প্রমেহ, যৌনব্যাধি ও প্রস্রাবের অসুখ শরীর যদি ফুলে ওঠে এবং ব্যথা করে সেই যন্ত্রণাও নটে শাক খেলে শান্ত হয়।
৪. বুকের দুধ বাড়ায়:
যে সব মায়েরা বাচ্চাদের দুধ খাওয়ান তাঁরাও নটে শাক ভাজা খেলে সুফল পাবেন কারণ নটে শাক স্তন্যদুগ্ধব।
৫. আয়ুর্বেদের মতে:
নটে শাকের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই। সব রকমের বিষ, সব রকম ধাতব বিষ দূর করতে নটে শাক ব্যবহার করা হয়। এই সব বিষ থেকে উৎপন্ন রক্তের দোষে নটে শাক উপকারী।
এছাড়াও চোখে সমস্যা, পেটের অসুখ, পুরোনো পেটে অসুখ, পেটে মোচড় দেওয়া, নাক মুখ থেকে রক্তপড়া বা পিত্ত, অশ, কোষ্ঠকাঠিন্য, লিভারের দোষ, পিলে বেড়ে যাওয়া অর পুরোনো জ্বরে নটে শাক খুব কাজ দেয়।
৬. ত্বকের সব অসুখ দূর করে:
ত্বকের রোগ, এমনকি কুষ্ঠরোগ, চর্মরোগেরও নটে শাক খেলে উপশম হয়। নটে শাকের রসে চিনি মিশিয়ে খেলে চুলকুনি সারে, শরীরের গরম হয়। নটে শাক ভাজা বা যে কোনো রকমভাবেই এই শাক নিয়মিত খেলে এসব রোগের কষ্টের হাত থেকে অনেকটা নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।
৭. মায়েদের জন্য উপকার:
যাঁরা মা হতে চলেছেন, যাঁরা ছোট শিশুর মা, যাঁরা সদ্য মা হয়েছেন সেসব মেয়েরাই নটে শাক খেলে উপকার পাবেন। যাঁরা শরীরের দিক থেকে খুব দুর্বল তাঁদেরও নির্ভয়ে খেতে দেওয়া যেতে পারে।
৮. চোখের সমস্যায়:
চোখের সব অসুখেই নটে শাক উপকারী। চোখ জ্বালা করা, চোখ লাল হওয়া, চোখে পিচুটি জমা, চোখের পাতা পিচুটিতে জুড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি সব অসুখ ও অস্বস্তি দূর করবার জন্যেই নিয়মিত যথেষ্ট পরিমাণে নটে শাক খাওয়া উচিত।
৯. শরীর সুস্থ রাখতে:
নটে শাক মধুর, পরিপাকেও মধুর, শরীরের পক্ষে শীতল, খিদে বাড়ায়, মলমূত্রের শুদ্ধি করে। সেইজন্যে রোগী বা সুস্থ সব রকম মানুষরে জন্যেই সমান উপকারী। পিত্তের গরমের জন্যে যে জ্বর তারও উপশম হয় নটে শাক খেলে।