বৌভাতের অনুষ্ঠানে বরের জানাজা : নববধূ হাসপাতালে

প্রকাশ | ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:০২ | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:৩১

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

 

 

 

 

রফিকুল ইসলাম নতুন বউ নিয়ে বাড়ী আসার পর থেকে সবার মাঝে উৎসবের আমেজ। বিয়ের সাজে সজ্জিত পুরো বাড়ী। সাজানো হলো বাসর। কিন্তু কে জানতো এই রাতেই যে রফিকুলের শেষ রাত। এমন মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে। অনেকে বলতে থাকেন, এমন মৃত্যু মানা যায় না। মাত্র বিয়ে করেছে ছেলেটা। এদিন তার বাড়িতে ছিলো বৌবাতের অনুষ্ঠান। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। অনুষ্ঠানের দিন তার মৃত্যু হলো।

 

জানাযায়, বিবাহোত্তর বৌভাতের অনুষ্ঠানের সকল কার্যক্রম চলছিল বেশ ধুমধাম করে। কনে পক্ষ ঢাক ডোল পিটিয়ে আনন্দ উল্লাস করে গাড়ি বহর নিয়ে উপস্থিতও হন বরের বাড়িতে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানেই খবর ছড়িয়ে পড়ে বর মারা গেছেন। এমনই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার (২ ডিসেম্বর) মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের বাজিতা গ্রামে। বিয়ের সব আয়োজন রেখেই ঐদিন বিকাল ৫টায় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয় বর মো. রফিকুল ইসলাম (২৫)এর মরদেহ। মির্জাগঞ্জ উপজেলায় এ রকম প্রথম কোন ঘটনায় সর্বত্রই শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়েছে।

 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (৩০ নভেম্বর) মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের বাজিতা গ্রামের সফেজ মিয়ার ছেলে মো. রফিকুল ইসলামের সাথে পার্শ্ববর্তী বেতাগী উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের মো. মন্নান মিয়ার মেয়ে ময়না আক্তার (১৮)এর সাথে কনের বাড়িতে বরযাত্রী নিয়ে উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিবাহ কাজ সম্পন্ন হয়। ওই দিনই মেয়েকে বৌ সাজিয়ে নিয়ে আসা হয় বরের নিজ বাড়ি বাজিতা গ্রামে। একদিন পরই মঙ্গলবার রাতে বর রফিক নিজের বাড়িতে স্বাভাবিক জ্বর নিয়ে একটু অসুস্থ বোধ করে। বুধবার সকালে চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

এদিকে নির্ধারিত তারিখে বুধবার বর রফিকের বাড়িতে কনের পক্ষের জন্য বৌভাতের আয়োজন করা হয়। বৌভাতে কনে পক্ষের লোকজন বরের বাড়িতে পৌঁছলেই  খবর আসে রফিক আর বেচেঁ নেই। বিয়ের আনন্দ ওখানেই থেমে যায়।

 

একমাত্র সন্তান ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা উভয়েই পাগল প্রায়। আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসীর সান্তনা দেয়ার কোন ভাষা নেই। মেহমানদের জন্য রান্না করা খাবার বাড়ির আঙ্গিনায় থরে থরে সাজানো পাতিলেই রয়ে গেছে।

 

এদিকে স্বামীর মৃত্যুর খবরে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন নববধূ ময়না আক্তার। তার শরীরেও স্বাভাবিক জ্বর দেখা দিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের তিনি ৪র্থ তালায় ৫নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন।

 

নিহত রফিকুল ইসলামের চাচা পশ্চিম চৈতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনসার উদ্দিন জানান, রফিকের বাবা সেনাবাহিনীর চট্রগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে রেকর্ড অফিসে (সিভিল বিভাগ) কর্মরত আছেন। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মা বাড়িতে থাকতেন। রফিক ও আমি রোববার একত্রে বিয়ের সকল কেনাকাটা করি কিন্তু আজ আমাদের মাঝে সে আর নেই। সব কিছুই শেষ হয়ে গেল।

 

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল হক জানান, রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। কিছুদিন পর পর তার রক্ত পরিবর্তন করতে হয়। রফিকুল অসুস্থ থাকায় এতদিন বিয়ে করেননি। সম্প্রতি পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। সোমবার অনুষ্ঠান করে নববধূকে বাড়িতে তুলে আনেন। বুধবার ছেলের বাড়িতে বৌভাতের আয়োজন করা হয়। মেয়েদের বাড়ির লোকজন ও স্থানীয় আত্মীয়-স্বজন বুধবার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন।

 

কিন্তু হঠাৎ করে সকাল ১০টার দিকে রফিকুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে দুপুর ১২টার দিকে তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

 

স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে নববধূ ময়না অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকেও তাৎক্ষণিকভাবে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে নববধূ চিকিৎসাধীন রয়েছেন।