নানা কর্মসূচিতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত

প্রকাশ | ০৭ মার্চ ২০২১, ২১:৩১

যাযাদি রিপোর্ট

 

যথাযথ মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ছাড়াও নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ। 

 

রোববার সকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর আগে দেশব্যাপী সব দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এদিন ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে আওয়ামী ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন। আজ সোমবার (৮ মার্চ) বিকেল ৩টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন)।

 

জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা :ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। পরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য ও দলের সিনিয়র নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

 

দীর্ঘদিন পর গণভবনের বাইরে প্রধানমন্ত্রী :দীর্ঘদিন পর সশরীরে গণভবনের বাইরে আসেন শেখ হাসিনা। এর আগে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন তিনি। আর বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে প্রতিনিধির মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তাছাড়া ১৫ আগস্টে শ্রদ্ধা নিবেদন ও জাতীয় সংসদ অধিবেশনেও সশরীরে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। 

 

সকাল ৭টার দিকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা। তারা চলে যাওয়ার পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

 

এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সকল অপশক্তিকে প্রতিহত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলাই হবে তাদের সাতই মার্চের শপথ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সঙ্গে নিয়ে সকল অপশক্তিকে প্রতিহত করাই হবে আজকের দিনের শপথ।

যে বিএনপি একসময় ৭ মার্চ পালন ‘নিষিদ্ধ’ করে রেখেছিল, সেই বিএনপি এখন ‘রাজনৈতিক কৌশল’ হিসেবে এ দিবস পালন করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারী আর ঘোষক এক নয়। বিএনপি একজন পাঠককে স্বাধীনতার ঘোষক বানাতে চায়।

 

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। রোববার সকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, ৭ মার্চ বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্য মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ডাকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

 

তাছাড়া আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, মৎস্যজীবী লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের নেতাকর্মীরা এ সময় জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় :বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনস্থ অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান। এর আগে, দিবসটি উপলক্ষে সকালে অন্যদের নিয়ে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

 

ঢাকার দুই মেয়রের শ্রদ্ধা :ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সেই বজ্র ঘোষণার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এবং শেখ ফজলে নূর তাপস। এদিন ডিএনসিসির গুলশানস্থ নগর ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এ সময় ডিএনসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

অপরদিকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এর আগে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’-এর ব্যানারে ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরের জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। পরে নগর ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতাকামীদের প্রেরণা :বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, স্বাধীনতা শব্দ হতে বঙ্গবন্ধু আলাদা করা সম্ভব নয়। সে চেষ্টা যে হয়নি তা নয়। ৫৬ বছরের জীবনে ২৩ বছর বঙ্গবন্ধু এদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু পরিপূরক, অভিন্ন। স্বাধীনতার সেই মহানায়ককে সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। করোনাকালে দক্ষ নেতৃত্বের কারণে কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের শীর্ষ ৩ নারী নেতার মধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা স্থান করেছেন। এটা আমাদের অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। রোববার সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ৭ মার্চ উপলক্ষে যুবলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ পরশ। এ সময় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা।

 

যাযাদি/এস