শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে ৮০ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইরাসের ধরণ

যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:২৫

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াল রূপ নিচ্ছে। প্রথম ঢেউ চলাকালে পিক টাইমে প্রতিদিন যে পরিমাণ রোগী শনাক্ত হতো, বর্তমানে তার দ্বিগুণ রোগী শনাক্ত হচ্ছে প্রতিদিন। এদিকে আইসিডিডিআরবি গতকাল তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানিয়েছে, দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইরাসের ধরণের অস্তিত্বই ৮০ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে প্রতিনিয়ত করোনার সংক্রমণ বাড়লেও মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ নেই। মানুষ প্রয়োজন ছাড়াই হাটবাজার ও অলিগলিতে জটলা করে আড্ডা দেয়। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে। চলমান ঢিলেঢালা বিধিনিষেধ কতটা প্রভাব ফেলবে, তা বোঝা যাবে আরও দুই সপ্তাহ পর। এর আগ পর্যন্ত অন্তত দুই সপ্তাহ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকতে পারে। একইভাবে সামনের তিন সপ্তাহে মৃত্যু আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) দেশটির নাগরিকদের কোনো দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সংক্রমণ বিবেচনায় চারটি স্তর নির্ধারণ করেছে। এ তালিকায় এখন বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ স্তরে। এই স্তর হচ্ছে যেখানে সংক্রমণ খুবই উচ্চ। ২ এপ্রিল সিডিসি বাংলাদেশ ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে।

সিডিসি সতর্কবার্তায় বলেছে, বাংলাদেশের এখনকার পরিস্থিতি এমন যে, টিকা নেওয়া কোনো ব্যক্তিও সেখানে ভ্রমণ করে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন। সিডিসি চতুর্থ স্তর নির্ধারণ করে সর্বশেষ ২৮ দিনের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে। দুই লাখের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে এমন অঞ্চল বা দেশের ক্ষেত্রে ২৮ দিনের মোট আক্রান্তের হার যদি প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ১০০ জনের বেশি হয়, তা হলে সেটি চতুর্থ স্তরে পড়ে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২৮ দিনে বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে আক্রান্তের হার ৬০০-এর বেশি। দীর্ঘদিন পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকার পর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণে ঊর্ধ্বমুখী ভাব দেখা দেয়। এর পর মার্চে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের মধ্যে যেমন উদাসীনতা রয়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারি জোর চেষ্টাও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। আবার বিধিনিষেধ তুলে নিতে গত দুদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভও হয়েছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত গত বছরের ৮ মার্চ। এর পর যত দিন যেতে থাকল, করোনার সংক্রমণ ততই বাড়তে থাকে। সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে জুন-জুলাইয়ে সংক্রমণের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছায়। এর পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে সংক্রমণ কমতে কমতে ফেব্রুয়ারিতে রোগী শনাক্তের সংখ্যা ৩০০ জনের নিচে এবং মৃত্যু পাঁচ-ছয়জনে নেমে আসে। কিন্তু হঠাৎ করে মার্চের শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন যেখানে ৩০০ জনের মতো শনাক্ত হতো, বর্তমানে সাড়ে সাত হাজারের বেশি শনাক্ত হচ্ছে। ওই সময়ে প্রতিদিন পাঁচ-ছয়জন মারা গেলেও এখন ৫০ থেকে ৬০ জনের বেশি মারা যাচ্ছেন।

এদিকে করোনা সংক্রমণ সারাদেশে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লেও মানুষ বর্তমানে আমলে নিচ্ছে না। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি খুব একটা মানছে না। সরকার করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ৫ এপ্রিল বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। অথচ সরকারের আরোপিত বিধিনিষেধ উপেক্ষা করছে। অনেক মানুষই প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তাঘাটে, হাটবাজার ও অলিগলিতে জড়ো হয়ে আড্ডা দিচ্ছে।

যাযাদি/এসএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে