প্রেস ক্লাবে জলবায়ু সম্মেলনে অর্জন ও অপ্রাপ্তি শীর্ষক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত

প্রকাশ | ২৯ নভেম্বর ২০২১, ১৯:০৫

যাযাদি রিপোর্ট

 

 

প্রতিবারের ন্যায় এবারও স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ ২৬) ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উচ্চ হারে কার্বন নিঃসরণকারী উন্নত দেশগুলো। কিন্তু অতীতের মতো এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা করছেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশের বিভিন্ন প্রতিনিধিরা। তাই জলবায়ুর প্রভাব থেকে বাঁচতে কেবল প্রতিশ্রুতি না দিয়ে কয়লা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসার দাবি আলোচকদের।

 

সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সিপিআরডি আয়োজিত কপ-২৬ এর অর্জন এবং অপ্রাপ্তি পুনর্মূল্যায়ন শীর্ষক একটি পর্যালোচনা সভায় কোস্ট ফাউন্ডেশন, সিসিডিবি, সিডিপি, ইপসা, মালেয়া ফাউন্ডেশন, এসডিএস, ক্যানসা-বাংলাদেশ ২৬তম জলবায়ু সমঝোতা সম্মেলনের পর্যালোচনা ও নাগরিক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

 

সভায় সভাপতির বক্তব্যে পিকেএসএফের সভাপতি ড. খালিকুজ্জামান বলেন,  নীতিনির্ধারকরা দেশের আঞ্চলিক সমস্যাগুলো সরাসরি কোনোদিন দেখেনি। তারা কিছু লোক পাঠিয়ে সেখান থেকে কেবল তথ্য সংগ্রহ করেন মাত্র। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আকাক্সক্ষাগুলো এসব সম্মেলনে বাস্তবায়ন হয় না। বরং ধনী দেশগুলোর এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করা হয়। যা ক্ষতিগ্রস্তদের কোন কাজে আসে না।

 

তিনি বলেন, যদি আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে না পারি এবং এটিকে যদি ২ ডিগ্রি ঘোষণা করা হয় তাহলে তা অনেকে দেশে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। অথচ এবারও সম্মেলনে কয়লা ও ফসিল ফুয়েল উত্তোলনের বিষয়ে কোনো শক্ত অবস্থানে যেতে পারেনি দেশগুলো। যদিও তারা এর ব্যবহার ও  উত্তোলনের হার কমাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু সে ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। যা শুভংকরের ফাঁকি বলেই ধরে নেওয়া যায়।

 

এদিকে অ্যাটপটেশনের নামে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে চড়া সুদে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ জানায় আলোচকরা। তারা বলেন, অচিরেই  কয়লা ও ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে এবং তা পুরোপুরি বন্ধ করতে সময় বেঁধে দিতে হবে। নইলে ঋণের বোঝা বাড়িয়ে আমাদের মতো দেশগুলো কতদিন অ্যাডাপটেশন করবে। এছাড়াও জলবায়ু মোকাবিলা ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সহায়তায় গঠিত ফান্ডে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকারী অনেক উন্নত ও ধনী দেশ তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ দেয় না। এসব সম্মেলনে এমন লোক দেখানো প্রতিশ্রুতি থেকেও তাদের বের হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আলোচকরা।

 

এ সময় প্রধান বক্তার বক্তব্যে শামসুদ্দোহা বলেন, ‘অনেক সীমাবদ্ধতা এবং সমালোচনা থাকলেও ‘কপ-২৬’ এ অনেক ভালো অর্জনও আছে।  বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে বিশ^সম্প্রদায়ের একমত হওয়ার বিষয়টিকে নতুন পথচলার সূচনা বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আইপসিসির রিপোর্ট-৬ প্রকাশিত হওয়ার পর পরই ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে বৈশি^ক তাপমাত্রাকে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে আমাদের দাবিটি আরও দৃঢ়ভিত্তি পেয়েছে।’

 

সভায় সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফর সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহম্মেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. নুরুল কাদের, বাংলাদেশ পরিবেশ সংবাদিক ফোরামের সভাপতি কামরুল ইসলাম, ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিষ্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান , সিডিপির নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গির হাসান মাসুম, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক সৈয়দ আমিনুল হকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সংগঠনের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা।

 

যাযাদি/ এস