​ বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধন সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ: হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:৩০

যাযাদি ডেস্ক

 

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, এটি এমন একটি সম্পর্ক যার গভীরতা রয়েছে এবং সাধারণের বাইরেও একটি তাৎপর্য রয়েছে। এটি এমন একটি বন্ধন যা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।

 

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) নয়াদিল্লির ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্সে (আইসিডব্লিউএ) মৈত্রী দিবসের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শ্রিংলা।

 

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘দিনটি শুধু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী নয়, এটি দুই মহান জাতি এবং দুজন মহান মানুষের মধ্যে একটি অনন্য সম্পর্কও উদযাপন করে। এটি অভিন্ন একটি ঐতিহ্য। এটি একটি মহান যৌথ সংগ্রামকেও স্মরণ করে। এটি আমাদের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরে। মৈত্রী দিবস আরও অনেক কিছুকে স্মরণ করে।’

 

 শ্রিংলা বলেন, ‘এটি আমাদের জাতি ও জনগণের একে-অপরের প্রতি আস্থাকে চিহ্নিত করে। এটি সেই বিশ্বাসকে নির্দেশ করে যে উভয় জাতি ও জনগণেরই একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ রয়েছে এবং এজন্য কাজ করতে দুই দেশই সংকল্পবদ্ধ। দুই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এই ঐতিহাসিক দিনটিকে ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে সূচিত করার সিদ্ধান্ত আমাদের বন্ধনের দৃঢ়তা, স্থায়িত্ব ও শক্তির প্রতিফলন করে। এটি আমাদের দুই জাতির মধ্যে যৌথ সংগ্রামের স্মৃতি এবং অব্যাহত সংহতিকে সম্মানিত ও পবিত্র করে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ঢাকা ও নয়াদিল্লি নয়, বিশ্বের ১৮টি রাজধানীতে ভারত ও বাংলাদেশ একসঙ্গে এই দিনটি উদযাপন করছে। যা নিশ্চিত করে যে এই বন্ধন কেবল শক্তিশালী নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য অভিন্ন আশাবাদ ও সমৃদ্ধির জন্য অবিচলতাকে নিশ্চিত করে। বঙ্গবন্ধুকে মহান ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব’ উল্লেখ করে শ্রিংলা বলেন, ভারত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে অভিবাদন জানায়। তিনি আমাদের সময়ের অন্যতম মহান ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি আক্ষরিক অর্থে জাতির ভাগ্যকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।’

 

অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান, আইসিডব্লিউএ’র মহাপরিচালক অ্যাম্বাসেডর বিজয় ঠাকুর সিং ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার অ্যাম্বাসেডর রাজিত মিত্তর উপস্থিত ছিলেন।

 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট টেনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘৫০ বছর আগে বাংলাদেশের মানুষ একটি ব্যাপক সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। তারা অন্যায় শাসনের হাত থেকে নিজেদের স্বাধীন করার জন্য লড়াই করেছিল, যা ইতিহাসের অন্যতম মহান সংগ্রাম। স্বাধীনতার এই সংগ্রামে ভূমিকা রাখতে পারা ভারতের জন্য বিশেষ সৌভাগ্যের। ভারত সৌভাগ্যবান কারণ তারা বাংলাদেশের জনগণের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে তাদের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে পেরেছে। বাংলাদেশের জনগণ এই সংগ্রামে বিজয় লাভ করে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে ভারত সেই আনন্দের সহভাগী হয়।’

 

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের সর্বোচ্চ গুরুত্বের প্রতিফলন এই সফর— জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় সুবর্ণজয়ন্তী বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। মহামারির পরে এটি রাষ্ট্রপতির প্রথম সফর। মহামারির পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দেশের বাইরে প্রথম সফরের গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সফর করছেন। এটি বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের সর্বোচ্চ গুরুত্বের প্রতিফলন।’

 

শ্রিংলা বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলোর উদ্ভাবনী কূটনৈতিক সমাধান করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে স্থল সীমানা চুক্তি স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন এবং সমুদ্রসীমার সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে উভয় দেশই সীমান্ত ও ব্লু ইকোনমির যৌথ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে। দুই দেশের মধ্যে ১৯৬৫ সালের আগে বিদ্যমান ছয়টি রেলসংযোগের মধ্যে পাঁচটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। ষষ্ঠটি শিগগিরই পুনরুদ্ধার করা হবে। আখাউড়াকে আগরতলার সঙ্গে যুক্ত করতে একটি অতিরিক্ত রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।’

 

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ভারত উন্নত সীমান্ত অবকাঠামো ও নীতিমালার মাধ্যমে জনগণ ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে। ভারতও উন্নত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সীমান্ত নিশ্চিতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।’

 

 

যাযাদি/এসএইচ