উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেল লাইনের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) আজ বৃহস্পতিবার পূর্ণ হলো। সচিবালয় ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কিছু অংশে কংক্রিটের স্ল্যাব বসানো বাকি ছিল। গত রাতে বেশির ভাগ স্ল্যাব বসানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সর্বশেষ স্ল্যাব বসানো হয়। এর মাধ্যমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার টানা উড়ালপথ নির্মাণকাজ শেষ হয়।
ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের দায়িত্বে নিয়োজিত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে উড়ালপথের ওপর রেললাইন বসানো হয়। ওই অংশে পরীক্ষামূলকভাবে মেট্রোরেল চলাচল করছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে আজ উড়ালপথের কাজ শেষ হলে সেখানে রেললাইন বসানো, বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ শুরু হবে।
আগামী ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেল যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে বলে জানিয়েছে সরকার। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো পথে মেট্রোরেল চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। অবশ্য এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের পথের নাম লাইন-৬।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক বলেন, জানুয়ারির মধ্যে পুরো লাইন-৬–এর উড়ালপথ নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্য ছিল। এই লক্ষ্য অর্জন একটা মাইলফলক। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বড় একটা কাজ শেষ হচ্ছে। এখন আস্তে আস্তে মেট্রোরেলের নিচের পথ খুলে দেওয়া যাবে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, এই প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ০৮ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণকাজ এগিয়েছে ৭৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত থাকছে ১৬টি স্টেশন। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের নয়টি স্টেশনের কাজ শেষ পর্যায়ে। বাকি সাতটি স্টেশনের কাজও বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান। এ পর্যন্ত দেশে এসেছে ১০ সেট ট্রেন। প্রতি সেট ট্রেনে ছয়টি করে কোচ রয়েছে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন প্রকল্পের কাজে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে। ফলে আরও সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়তে পারে।
মেট্রোরেলে যে ১৬টি স্টেশন থাকছে, এর নিচে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে যাত্রীরা সহজে ওঠা-নামা করতে পারবেন না বলে মনে করছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। এ জন্য স্টেশনের আশপাশে বাড়তি জমি অধিগ্রহণ করে যাত্রীদের চলাচল সহজ করা এবং পাশের ফুটপাত উন্নত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে উত্তরাসহ কিছু স্টেশন ঘিরে আয়বর্ধক অবকাঠামো নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নির্মাণ ব্যয়ের মতোই সরকারের এ মেগা প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার খরচও তুলনামূলক বেশি। ফলে কেবল যাত্রী পরিবহন করে মেট্রোরেলের ব্যয় মেটানো কঠিন হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে বিপণিবিতান, হোটেল, বিনোদনকেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এমডি এম এ এন সিদ্দিক বলেন, বাড়তি জমি অধিগ্রহণেই পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় করতে হবে। এ ছাড়া ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু ব্যয় বাড়াতে হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মেট্রোরেল আর্থিকভাবে সচ্ছল হবে এবং যাত্রীদের যাতায়াত আরামদায়ক হবে। তিনি বলেন, বর্তমান নির্মাণকাজের কোনো ব্যয় বাড়বে না। বাড়তি ব্যয়টি আলাদা প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে।
যাযাদি/এসএইচ
Copyright JaiJaiDin ©2022
Design and developed by Orangebd