পাগলা মসজিদে ৮ কোটি টাকার সঙ্গে মিললো প্রেমের চিরকুট

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৭

যাযাদি ডেস্ক
ছবি-যায়যায়দিন

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স থেকে এবার ২৭ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে মিলেছে বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনার গয়নাও। 

পূর্বের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সের টাকা। এবার জমা পড়েছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। যা এ যাবত কালের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। এই টাকার সঙ্গে বিদেশী মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করলে পরিমাণ ৮ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। দানবাক্স খুলে এবার টাকার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও পাওয়া গেছে মনোবাসনা পূর্ণ করতে বিভিন্ন চিরকুট।

এমন একটি চিরকুট পাওয়া যায় দানবাক্সে, যেখানে একজন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে জীবনসঙ্গী করে পেতে চিরকুট লেখেন। চিরকুটে লেখাছিল—

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি; কিন্তু মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে না।


আমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি যে আল্লাহ তাকে যেন আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে কবুল করেন। মেয়েটার নাম মোসা. সারভীন আক্তার। আমার নাম সাইফুল ইসলাম। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমাদের কবুল করেন।

আল্লাহ আমি যেন একটা মানসম্মত নাম্বার পাই, একটা ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারি। আমার মাথার সব খারাপ চিন্তা দূর হয়ে যায়। আল্লাহ আমার মা-বাবারে ভালো রেখ। আমি যেন রফিকুল ইসলাম কলেজে ভর্তি হতে পারি।

এর আগে শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ ও ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দানবাক্স গুলো খোলা হয়।
 
সাধারণত তিন মাস পর এই মসজিদের দানবাক্স খোলা হলেও এবার চার মাস ১০ দিন পর শনিবার সকালে এই দানবাক্স খোলা হয় বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
 
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় মসজিদের দানবাক্স খোলার সময় জেলা প্রশাসক ছাড়াও কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ উপস্থিত ছিলেন। 

পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মোমতাজসহ ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে ৭০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, পাগলা মসজিদ ও মাদ্রাসার ৩৪ জন শিক্ষক ও ১০২ জন ছাত্র টাকা গণনা শুরু করেন। 

জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদ এ এলাকার মানুষের একটি আবেগের স্থান। যে কারণে আমরা প্রতিবারই দান হিসাবে বিপুল পরিমাণ টাকা পেয়ে থাকি। 


‘আমরা মানুষের স্বপ্ন ও ইচ্ছা অনুযায়ী বর্তমান মসজিদের স্থানে একসাথে ৩০ হাজার মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারে এমন একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করব। আধুনিক স্থাপত্যের এ মসজিদ নির্মাণে অচিরেই নকশা চূড়ান্ত করাসহ কাজ শুরু হবে।’ 
জেলা প্রশাসক আরও জানান, প্রাপ্ত দানের টাকা থেকে পাগলা মসজিদ এবং এর অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও গোরস্থানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এ ছাড়া দানের টাকায় জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানায় সহায়তার পাশাপাশি গরিব ছাত্র ও দুস্থদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। 

তিনি জানান, এর আগে ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ২৩ বস্তা টাকা থেকে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। নগদ টাকার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া গিয়েছিল। 

কথিত আছে, প্রায় পাঁচশ বছর পূর্বে বাংলার বারো ভূঁইয়া বা প্রতাপশালী বারোজন জমিদারের অন্যতম ঈশা খাঁর আমলে দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা নামক এক ব্যক্তি নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে ওই স্থানটিতে মসজিদটি নির্মিত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারেই মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায়। 

সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট তিনতলা পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় অবস্থিত পাগলা মসজিদটি প্রায় চার একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত।

যাযাদি/ এস