আট মাসের সমস্যা সাত দিনে সমাধান করলেন নবাগত ডিসি

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:২০

বিশেষ প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পরদিনই স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জেলার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে। সেই সভায় একজন সাংবাদিক জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় ফলপট্টি এলাকায় দুই নম্বর রেল সিগনালে স্থায়ী গেট না থাকায় যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। চাষাঢ়া রেল স্টেশনের অধীন চারটি ক্রসিংয়ের কোনোটাতেই স্থায়ী গেট না থাকায় রশি দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে। এটি যাত্রী এবং রেলওয়ের দায়িত্বরত গেটম্যান উভয়ের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

অভিযোগ শুনেই ডিসি সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিতে তার এক স্টাফকে পাঠান। তাকে ছবি ও ভিডিও করে আনার নির্দেশও দেন। ছবি ও ভিডিও দেখে অভিযোগের সত্যতা পান ডিসি জাহিদুল। তাৎক্ষণিক কথা বলেন রেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তাদের অনুরোধ করেন দ্রুত ২ নম্বর গেটসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার সব রেল ক্রসিংয়ে স্থায়ী লোহার গেট স্থাপন করতে। ডিসির নির্দেশ পেয়ে দ্রুত গেট নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

গত বুধবার নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ফলপট্টি এলাকায় অবস্থিত ২ নম্বর গেটে স্থায়ী গেট নির্মাণ কাজ শেষ হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়- ঝুঁকি মুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করছেন দায়িত্বরত গেটম্যান সরল রায়।

প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানান, ডিসি স্যারের নির্দেশে স্থায়ী গেট নির্মাণ শেষ হয়েছে আজ। গেট না থাকায় আগে ট্রেন এলে রশি দিয়ে যানবাহন ও লোক চলাচল থামানোর চেষ্টা করতাম। কিন্তু রশির বাধা অতিক্রম করে অনেক যানবাহন, বিশেষ করে সিএনজি অটোরিকশা এবং ব্যাটারি চালিত রিকশা ধাক্কাধাক্কি করে রেল ক্রসিং পার হত। কিন্তু আজ লোহার স্থায়ী গেট নির্মিত হওয়ায় সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করব।

এক প্রশ্নের জবাবে গেটম্যান সরল রায় স্বীকার করেন, গত আট মাস ধরে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। প্রথম থেকেই রশি দিয়ে গেটে দায়িত্ব পালন করছি।

সরল রায়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ১ নম্বর গেটের গেটম্যান রেজাউল ইসলাম স্বীকার করেন, এখানে আগে স্থায়ী গেট না থাকায় দায়িত্ব পালন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সরল ও রেজাউল দুজনই জেলার নবাগত জেলা প্রশাসক জাহিদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

সিগনালে আটকে থাকা রিকশাযাত্রী নিগার সুলতানা লতা বলেন, সামান্য এই সমস্যা সমাধানে যদি স্বয়ং ডিসি স্যারের হস্তক্ষেপ লাগে, তাহলে রেলের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব কী? আমি আমার বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনা-নেওয়ার জন্য প্রতিদিন এই রেল ক্রসিং ব্যবহার করি। ওদের নিয়ে ঝুঁকি নিয়েই রশি অতিক্রম করতাম। কিন্তু লোহার ব্যারিয়ার থাকায় সেই সুযোগ নাই, আমাদের ঝুঁকিও নেই।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম উল্টো অভিযোগ করে বলেন, আমার এলাকায় মাত্র একটা ব্যারিয়ারে রশি দিয়ে কাজ চালানো হতো। আজ স্থায়ী গেট নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু আপনি চাষাঢ়া রেলস্টেশনে গিয়ে দেখুন, সেখানে চারটি সিগনালের কোথাও স্থায়ী গেট নাই। সব জায়গায় স্থায়ী গেট না থাকায় রশি দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে।

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এইগুলো আমাদের ট্রাফিক বিভাগের কাজ না। রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের কাজ ব্যারিয়ার নির্মাণ করা।

এই অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সিরাজ জিন্নাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, ডিসি মহোদয়ের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হয়েছে। আমি পরিদর্শন করে যেসব গেটে সমস্যা আছে সেগুলোতে স্থায়ী গেট পুনরায় নির্মাণ করে দিচ্ছি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনা ঘটার আগেই আমাদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। নারায়ণগঞ্জবাসীর নিরাপদ রেলযাত্রার জন্য সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জেলার এই অভিভাবক আশ্বাস দেন।

জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম এর আগে রাজবাড়ী জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানের স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা প্রশাসক অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন এবং সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে কাজ করতেন। তারা আরও বলেন, জেলা প্রশাসক আমাদের রাজবাড়ী জেলাকে একটি আদর্শ ও সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে কাজ করতেন।

যাযাদি/ এসএম