নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর: উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন

প্রকাশ | ০৭ মে ২০২৫, ২১:০৮ | আপডেট: ০৭ মে ২০২৫, ২১:১০

কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, বিশেষ প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথসমূহের নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি আজ সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে নৌপরিবহন অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত ‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফিটনেস বিহীন নৌযান চলাচল বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সকল নৌযানের রুট পারমিট ও লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নের বিষয়ে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী বা পণ্য বোঝাই না করতে নৌযান মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। আইন অমান্যকারী অনেককে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। রাতে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। নদীর নাব্যতা বজায় রাখতে বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অপরাধ প্রবণ অঞ্চলগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে, নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ঘাটসমূহে চাঁদাবাজি বন্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ঈদে নৌ-দুর্ঘটনা রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। যার ফলে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে নির্বিঘ্নে ঈদ যাত্রা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ঈদেও নৌপথের যাত্রীরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবেন মর্মে আশা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, একসময় নৌপথই ছিল দেশে যাতায়াতের  প্রধান মাধ্যম। কালক্রমে সেটি সংকুচিত হয়েছে। তারপরও বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মেরিটাইম কান্ট্রি। আমাদের ১টি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ মোট ৪টি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দেশেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত  নৌপথকে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। বর্তমানে পণ্য পরিবহণে শতকরা ৮০ ভাগ নৌপথের মাধ্যমে পরিবহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সন্দীপ ও মহেশখালীতে সরাসরি ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। আগামীতে আরো জনপদকে সংযুক্ত করা হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দেশে এমনও প্রত্যন্ত অঞ্চল এখনো রয়েছে যেখানে গত ৫০ বছরেও নৌযোগাযোগসহ অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হয় নাই। সে সকল জায়গায় বিআইডব্লিউটিএ’র বিভিন্ন পল্টুন নির্মাণ করা হচ্ছে, যাতে সেখানকার অধিবাসীদের যাতায়াতের দৈনন্দিন কষ্টটা লাঘব হয়।

উপদেষ্টা আরও বলেন, নদীকে বাঁচাতে হবে নইলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। যেকোনো উপায়ে নদী দূষণ বন্ধ করতে হবে। নদী বাংলাদেশের প্রাণ। এদেশের হাজারের অধিক নদী ও ১০,০০০ কি.মি. মতো নৌপথ রয়েছে। এক তৃতীয়াংশ মানুষ এখনো নৌপথে যাতায়াত করে। নদীগুলোকে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় নদী দূষণ মুক্ত করতে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নদী দূষণ বেশি হয় যেখানে জনগণ ও কল কারখানার সংখ্যা বেশি থাকে। এ সময় অর্থ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে বুড়িগঙ্গা নদী পরিষ্কারের উদ্যোগ বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানান নৌপরিবহন উপদেষ্টা। 

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৪টি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আরো বেশি কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ সুগম হবে। এছাড়া, এলপিজি কনটেইনার জাহাজ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌযান মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সাধারণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান উপদেষ্টা। 

নদীমাতৃক বাংলাদেশের নৌপথে চলাচলত যাত্রী সাধারণ ও মালামালের নিরাপত্তা বিধান এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ৭ হতে ১৩ মে ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। এবারকার নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০২৫ এর প্রতিপাদ্য “দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান, সুস্থ থাকবে পরিবেশ, রক্ষা হবে প্রাণ”। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। বিশেষ বক্তা হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিসি এর চেয়ারম্যান মোঃ সলিম উল্লাহ (অতিরিক্ত সচিব) এবং বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। এছাড়াও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সভাপতিসহ অন্যান্য মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।