সাইকেলে দিনমজুরের ২০০ কিমি পাড়ি, পেছনে এক অন্যরকম গল্প...

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৫, ১৯:৫৪

যাযাদি ডেস্ক
মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে খাবার দেওয়া হয়। 

ছেলে যেন লেখাপড়া শিখে ভালো মানুষ হতে পারে—এটাই রিকশাচালক বাবা মো. রাজুর স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে ছেলের একটি সাইকেল ছিল খুব দরকার। 

অনেক কষ্ট করে নিজের জমানো অর্থে সাইকেলটি কিনেছেন তিনি, তবে ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় সেটি পরিবহনের খরচ জোগাড় করতে পারেননি। তাই ভরসা রেখেছেন নিজের পরিশ্রমী দুই পায়ে।

ঢাকার নাখালপাড়া লুকাস মোড়ে গত ১৫ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে জীবন চালান মো. রাজু। 

তার বাড়ি গাইবান্ধার তালুকজামিরা ফকিরহাটে। সেখানেই থাকেন তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে। নিজের ও পরিবারের খরচ বাঁচিয়ে এক মাস আগে তিনি ছেলের জন্য একটি সাইকেল কিনেছেন। 

তবে ঈদে বাড়ি ফেরার সময় দেখা গেল—পকেটে আছে মাত্র ২ হাজার ২০০ টাকা, আর বাসের টিকিটেই লাগবে প্রায় ২ হাজার টাকা। টিকিট কেটে গেলে পরিবারের জন্য কিছুই থাকবে না।

সাইকেলটি পরিবহন করতে বাসভাড়া লাগবে প্রায় ৩ হাজার টাকা। কিন্তু সব মিলিয়ে রাজুর হাতে আছে মাত্র আড়াই হাজার টাকা। 

সেই টাকাতেই ঈদের খরচ ও সাইকেল পরিবহনের সমাধান খুঁজতে গিয়ে তিনি নিলেন এক কঠিন সিদ্ধান্ত—২০০ কিমি পথ নিজেই সাইকেল চালিয়ে বাড়ি যাবেন।

গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ভোর ৫টায় তিনি মহাখালী থেকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর উদ্দেশে সাইকেল নিয়ে রওনা হন। টানা ২১ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে যখন তিনি বগুড়ায় পৌঁছান, তখন মধ্যরাত। 

বগুড়ার ঠেঙ্গামারা এলাকায় সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে তাকে থামানো হয়। মধ্যরাতে সাইকেল আরোহী দেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট আল ফাহাদ। রাজুর গল্প শুনে মুগ্ধ হন তিনি।

মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে খাবার দেওয়া হয়। 

এরপর রাজুর নিরাপদ যাত্রার জন্য এক ট্রাকে করে গাইবান্ধায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন লেফটেন্যান্ট ফাহাদ।

রাজু বলেন, ‘কনো উপায় না দেখে মহাখালী থেকে একটি ব্যাগ নিয়ে সাইকেলে রওনা হই। পথে তিনবার ৫০ টাকা করে দিয়ে কিছুটা পথ ভ্যানে চড়েছি। 

যমুনা সেতুতে সাইকেল নিয়ে পার হওয়ার অনুমতি পাচ্ছিলাম না। পরে একটি মিনি ট্রাকে ১০০ টাকা দিয়ে সেতু পার হই। ট্রাকটি গাইবান্ধা দিকে যাচ্ছিল, কিন্তু বেশি ভাড়া দিতে না পারায় তারা আমাকে নামিয়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন,‘এত দীর্ঘ পথ সাইকেলে পাড়ি দিতে পারব ভাবিনি। আগে কখনো এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। 

তবে ছেলের পড়াশোনার জন্য সাইকেল উপহার দিতে পারব, এটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ। সেনাবাহিনীর সদস্যরা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন, আবার ট্রাকের ব্যবস্থাও করেছেন—তাঁদের জন্যই এবার আনন্দে বাড়ি ফিরতে পারব।’