জুলাই বিপ্লবের নেপথ্য যোদ্ধা: সাদিক কায়েমের মুখে প্রতিরোধের গল্প

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৫, ১০:১৭

যাযাদি ডেস্ক
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম

২০২৪ সালের 'জুলাই বিপ্লব'—বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। শুধু একটি সরকারের পতন নয়, বরং এটি ছিল এক প্রজন্মের জেগে ওঠা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর সাহসী ঘোষণা। এই বিপ্লবের অন্তরালের কথাগুলো তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম।

তার ভাষায়, “এটি ছিল নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গর্জে ওঠা এক ইতিহাসগড়া প্রতিবাদ।”

সাদিক জানান, এই আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ ও বঞ্চনার মাটিতে। আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যখন মানুষের ভিতর চাপা আগুন জ্বলছিল, তখন সেই আগুনকে শিখায় পরিণত করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

তিনি বলেন, “দল-মত ভুলে সবাই এক ছাতার নিচে এসেছিল—একটাই লক্ষ্য, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা।”

শুধু ছাত্র নয়, এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, মাদরাসার ছাত্র, এমনকি ঘরে থাকা মা-বাবারাও। সাদিক বলেন, “এই বিপ্লব ছিল মানুষের বিপ্লব—নির্ভীক, নিরস্ত্র, কিন্তু অদম্য।”

সরকার যখন আন্দোলন দমাতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়, তখন আন্দোলনকারীরা ফিরে যান বাটন ফোন আর সিমকার্ডের যুগে। গড়ে ওঠে ‘কো-অর্ডিনেটর’ নামের বিকল্প নেতৃত্বব্যবস্থা। কোনো সভাপতি, কোনো জ্যেষ্ঠতা—শুধু দায়িত্ববোধ আর বিশ্বাস।

সাদিক বলেন, “আমরা নেতৃত্বহীন ছিলাম না—আমরা ছিলাম নেতৃত্ববিমুখ, যাতে কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে আন্দোলনকে বিক্রি না করতে পারে।”

রক্ত ঝরেছে, চোখের জল পড়েছে, তবুও পিছু হটেনি কেউ। সরকারি বাহিনী আর ছাত্রলীগের হামলায় আহত ও নিহত হয়েছে অসংখ্য তরুণ। কিন্তু তাদের আত্মত্যাগ পুরো জাতিকে কাঁপিয়ে দেয়। হল দখলমুক্তির সময় ছাত্রলীগের হিংস্র প্রতিরোধকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় সাধারণ ছাত্রদের একতা।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় প্রকাশ পায় একটি দাবিনামা—বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, দমনমূলক আইনের বাতিলসহ রাজনৈতিক সংস্কারের ছক। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার চোখ পড়ে এই জনজোয়ারে, তৈরি হয় বৈশ্বিক চাপ।

পরিণতিতে শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগ করে, গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জয় হয় জনতার।

সাদিক কায়েম বলেন, “এই বিপ্লব ছিল আমাদের আত্মত্যাগ, প্রত্যয় আর স্বপ্নের মিশ্রণে গড়া এক মহাকাব্য। কিন্তু এটিই শেষ নয়। সামনে আরও পথ, আরও চ্যালেঞ্জ।”

তার সতর্ক বার্তা— “আমরা যদি আবার দলাদলিতে জড়িয়ে পড়ি, ব্যক্তি স্বার্থকে সামনে আনি, তবে এই বিজয়ের মানে থাকবে না। বিপ্লবের রক্ত তখন বৃথা যাবে।”

সাদিকের কণ্ঠে কাঁপন ধরা আবেগ, “জুলাই বিপ্লব শুধু ইতিহাস নয়, এটা একটি প্রজন্মের স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। এখন সময় এসেছে—একটি ন্যায়ের বাংলাদেশ গড়ার। যেখানে কেউ শাসন করবে না, সবাই হবে শাসক।”

এই বিপ্লব ছিল মশালধারীদের উৎসব নয়—এটি ছিল অন্ধকার ভেদ করে সামনে এগিয়ে চলা এক সাহসী প্রজন্মের যাত্রা। জুলাই তাই শুধু একটি মাস নয়, এটি একটি চেতনা, একটি প্রতিজ্ঞা—একটি নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

http://https://youtu.be/CALQPP383yA?si=EBhO1b6l3jTx38rO